চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ইপিজেড) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক আট বছর আগে প্রথমবার সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তখন ব্যাংকে কোনো টাকা জমা ছিল না। হাতেও ছিল নামমাত্র নগদ টাকা। তবে তাঁর সেই ‘দুর্দিন’ আর নেই। এখন ব্যাংকেই জমা আছে ১৫ কোটি টাকা ৪৮ লাখ টাকা। নগদ আছে ৮৭ লাখ টাকা।
২০১৫ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এসে জিয়াউলের শুধু অস্থাবর সম্পত্তিই বেড়েছে ৬০ গুণের বেশি এবং বার্ষিক আয় ১০ গুণ। ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর সম্পদ যেন ফুলেফেঁপে উঠেছে। সঙ্গে সঙ্গে ‘ধনী’ হয়েছেন তাঁর স্ত্রীও।
২০১৫ ও ২০২১ সালে দুই দফা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এখন তিনি সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে চান। ২০১৫ সালে জিয়াউলের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল মাত্র ২৭ লাখ টাকার। আর এখন আছে ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। ওই সময় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর কোনো জমা টাকা ছিল না। এখন আছে ১৫ কোটি টাকা ৪৮ লাখ টাকা। দুবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর আয় বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ।
শুধু যে জিয়াউল হকের আয় বা সম্পত্তিই বেড়েছে, তা নয়, একসময়ের ‘স্বশিক্ষিত’ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের শিক্ষাগত যোগ্যতারও উন্নতি হয়েছে। এখন তিনি এইচএসসি পাস। আর নিজেই ধনী হয়েছেন এমন নয়, তাঁর স্ত্রীর আয় ও সম্পত্তিও বেড়েছে প্রায় সমানভাবে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর সম্পদ যেন ফুলেফেঁপে উঠেছে জিয়াউল হকের। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন প্রথমবারের মতো। এরপর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি। এখন নিজেকে কাউন্সিলর পদে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না।
আয়-সম্পত্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাও বেড়েছে তাঁর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ইপিজেড) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলেও তা পাননি। নির্বাচন কমিশনে ২০১৫ ও ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের জন্য এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে জিয়াউল হকের সম্পত্তি ও আয়ের তথ্য পাওয়া গেছে।
এই ব্যাপারে জানতে গতকাল রোববার রাতে জিয়াউল হককে ফোন করা হলে তিনি সভায় ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
২০১৫ ও ২০২১ সালে দুই দফায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এখন তিনি সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে চান। ২০১৫ সালে জিয়াউলের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল মাত্র ২৭ লাখ টাকার। আর এখন আছে ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। ওই সময় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর কোনো জমা টাকা ছিল না। এখন আছে ১৫ কোটি টাকা ৪৮ লাখ টাকা। দুবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর আয় বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ।
সম্পত্তি বেড়েছে ৬০ গুণ
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জিয়াউল হকের অস্থাবর সম্পত্তি আছে ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। এর মধ্যে শুধু ব্যাংকেই জমা আছে ১৫ কোটি টাকা ৪৮ লাখ টাকা। নগদ আছে ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
২০১৫ সালে অস্থাবর সম্পত্তি ছিল মাত্র ২৭ লাখ টাকার। এর মধ্যে তাঁর একমাত্র গাড়িটির দাম ছিল ২৫ লাখ টাকা। ওই সময় হাতে নগদ ছিল মাত্র ৮০ হাজার ৭৫০ টাকা। আর ব্যাংকে কোনো টাকা জমা ছিল না। আগে কোনো সোনা না থাকলেও এই সময়ে তা অর্জন করেছেন। এমনকি তাঁর স্ত্রীর থেকেও বেশি।
বর্তমানে তাঁর হাতে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের সোনা রয়েছে। অথচ তাঁর স্ত্রীর কাছে আছে ৪০ হাজার টাকার সোনা।
কৃষি খাতেই আয় কোটি টাকা
প্রথম যখন নির্বাচন করছিলেন, তখন জিয়াউলের বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ২৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে আসত ৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা। আর অন্যান্য খাতে আয় ছিল ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।
কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর সুদিনের দেখা পেয়েছেন জিয়াউল হক। বছরের পর বছর ধরে বেড়ে চলেছে তাঁর বার্ষিক আয়। এখন যার পরিমাণ ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। শুরুতে কৃষি খাতে তাঁর কোনো আয় ছিল না। এখন বছরে এই খাত থেকেই আসে দেড় কোটি টাকা। কৃষি খাতের মধ্যে মৎস্য চাষে বিনিয়োগ রয়েছে তাঁর।
অতীতে নির্বাচনের সময় বিভিন্ন প্রার্থীর হলফনামা যাচাই করে দেখা গেছে, সম্পদশালী কিংবা হঠাৎ করে অস্বাভাবিক সম্পদ বেড়েছে, এমন সব প্রার্থীর অনেকেই কৃষি খাত বা মৎস্য খাতে বিনিয়োগ দেখিয়েছিলেন। মূলত এই খাতে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ যেমন আছে, তেমনি করের হারও কম।
একসময় বাড়িঘর, দোকানপাট বা অন্যান্য ভাড়া খাত থেকে কোনো আয় ছিল না জিয়াউলের। এখন আর সেদিন নেই। শুধু ভাড়া থেকেই আসে ৬৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে আসে ২০ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া ২০১৫ সালে যেখানে জিয়াউল হকের অকৃষি জমি ছিল ১৭ গন্ডা বা ৩৪ শতক। ৬ বছরের ব্যবধানে ২০২১ সালে তা হয় ২১ গন্ডা বা ৪২ শতক।
স্ত্রীর সম্পদ-আয়ও পিছিয়ে নেই
২০১৫ সালে প্রথমবার নির্বাচন করার সময় হলফনামায় ‘প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয়’ ছকের সব ঘরেই ‘প্রযোজ্য নহে’ লিখেছিলেন জিয়াউল। ২০২১ সালের নির্বাচনের সময়ও একই ধরনের তথ্য দেন তিনি।
তবে দুই বছরের ব্যবধানে ‘সোনার হরিণ’–এর দেখা পেয়েছেন জিয়াউলের স্ত্রী। তিন বছর আগেও যেখানে ১ টাকা আয় ছিল না, সেখানে এখন বার্ষিক আয় ৭৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। স্বামীর মতো স্ত্রীর আয়েরও বেশির ভাগ আসে কৃষি খাত থেকে, পরিমাণ ৩৫ লাখ টাকা। আর ব্যবসা থেকে ৩০ লাখ টাকা। ডিপিএস আছে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার। অন্যান্য আয় ৯ লাখ টাকা।
২০২১ সালের সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের জন্য দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, ওই সময় স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল মাত্র ৮১ হাজার টাকার, এখন আছে প্রায় ১ কোটি টাকার। তিন বছর আগে কোনো গাড়ি না থাকলেও তাঁর স্ত্রীর কাছে বর্তমানে আছে তিনটি গাড়ি। অথচ স্বামীর আছে মাত্র একটি।