জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন। আজ শনিবার দুপুরে স্থানীয় একটি প্রেসক্লাবে
জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন। আজ শনিবার দুপুরে স্থানীয় একটি প্রেসক্লাবে

জামালপুর পৌরসভা

সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নির্যাতিত যুবকের

ফেসবুক লাইভে জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ওরফে ছানুর ভূমিদস্যুতা, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় এক যুবককে নির্যাতন ও উল্টো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এমন অভিযোগ এনে ছানোয়ারের বিরুদ্ধে আজ শনিবার দুপুরে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নির্যাতিত ওই যুবক।

ওই যুবকের নাম নূর হোসেন আবাহনী। তিনি জামালপুর পৌর শাখার নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তিনি জামালপুর শহরের পাথালিয়া এলাকার আবদুর রশিদের ছেলে। সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লাইভ করায় অপরাধে ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যার দিকে নূর হোসেনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে নূর হোসেন বলেন, ‘সাবেক মেয়র ছানোয়ার একজন ভূমিদস্যু, তিনি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ, একক নিয়ন্ত্রণে টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, নদীর জমি দখল ও অন্যায়ভাবে লোকজনের জমি দখলসহ নানা অপরাধ করছিলেন। আমি একজন নাগরিক হিসেবে ফেসবুকে লাইভ করেছিলাম। তাঁর (মেয়র) বিরুদ্ধে কথা বলার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে অস্ত্র ধরে আমাকে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে নেওয়া হয়। ’

তিনি বলেন, ‘ইফতারের ঠিক আগমুহূর্তে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার বাড়ির সামনে একটি মাঠে নিয়ে মেয়র নিজে আমাকে মারধর করতে শুরু করেন। এরপর তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে রড, শাবল ও হকিস্টিক দিয়ে যে যেভাবে পেরেছে আমাকে মারতে থাকে। মারতে থাকা অবস্থায় ইফতারের সময় হয়। তখন আমাকে ইফতার করার জন্য শুধু পানি দেওয়া হয়। পানি খাওয়ার পর তারা আমার হাত-পা বেঁধে সারা শরীরে পেটাতে থাকে। এতে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় মেয়রের কম্পপুর প্রজক্টে। সেখানে তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে হত্যার জন্য নিয়ে যায়। তাদের বলতে শুনি, তোরে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তখন আমি একটু পানি খেতে চাই। তারা (সন্ত্রাসী) আমাকে পানির বদলে প্রস্রাব খেতে বলে। এ সময়ের মধ্যে তারা আমাকে হত্যার জন্য অস্ত্র ও দড়ি নিয়ে আসে। বিষয়টি আমি বুঝতে পেরে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে থাকি। তখন আবার তারা আমাকে মারধর শুরু করে। হঠাৎ তাদের কাছে একটি ফোন আসে। তখন তারা আমাকে হত্যা করে না। কিন্তু মারধর করে, আমার মাথার চুল ও ভ্রু কেটে দেন। এভাবে নির্যাতনের পর আমাকে পুলিশের কাছে দিয়ে দেয়। অবস্থা খারাপ থাকায় চিকিৎসার জন্য পুলিশ আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু আমাকে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। পরে মেয়র আমার বিরুদ্ধে উল্টো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।’

আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার পরও সেই সময় আমাকে কেউ সহযোগিতা করেননি। তখন আমি তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারিনি। ব্যবস্থা নেওয়ার অবস্থাও ছিল না। কারণ, তাঁর কথার বাইরে স্থানীয় প্রশাসনের যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না। তিনি যা বলতেন, সেটাই হতো। আমার বিরুদ্ধে মেয়রের করা মামলায় ময়মনসিংহে গিয়ে এখনো হাজিরা দিতে হয়। আমি ওই মামলা থেকে এখন মুক্তি চাই এবং মেয়রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

সাবেক মেয়র ছানোয়ার পলাতক থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।