জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রায়হান রহমতুল্লাহকে একটি হত্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁর মুক্তির দাবিতে উপজেলাটিতে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে হরতাল পালন করছে কর্মী ও সমর্থকেরা। এতে সেখানে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। তবে চলমান এইচএসসি পরীক্ষাকে হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
রায়হান রহমতুল্লাহ মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান।
আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একটি হত্যা মামলায় গতকাল সোমবার দুপুরে রাহয়ানকে কারাগারে পাঠানো আদেশ দেন জামালপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত। এর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁর অনুসারীরা। বিকেল থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলা এই কর্মসূচিতে উপজেলায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গতকাল রাতেই সকাল-সন্ধ্যা (আজ মঙ্গলবার) হরতালের ডাক দেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আজ সকাল আটটা থেকে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে রায়হান রহমতুল্লাহর অনুসারী ও কর্মী-সমর্থকেরা অবস্থান নেয়। তাঁর মুক্তির দাবিতে খণ্ড খণ্ড মিছিলও বের করা হয়। শহরের নয়াপাড়া এলাকায় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন রহমতুল্লাহর সমর্থকেরা। এ ছাড়া উপজেলায় কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। উপজেলা শহরের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। তাঁর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। কারণ, ওই হত্যার সঙ্গে চেয়ারম্যানের (রহমতুল্লাহ) কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়ায় রহমতুল্লাহকে ঠেকাতে চার বছর পর ওই হত্যা মামলায় তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।মাদারগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর ও রহমতুল্লাহর সমর্থক মো. হাসানুজ্জামান সাগর
সাধারণ জনগণ এই হরতালের ডাক দিয়েছে বলে দাবি করেছেন মাদারগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর ও রহমতুল্লাহর সমর্থক মো. হাসানুজ্জামান সাগর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রায়হান রহমতুল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর মুক্তির দাবিতে সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে ৭২টি ওয়ার্ডের সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচি পালন করছে। তবে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা এই হরতালের আওতামুক্ত।
হাসানুজ্জামান যোগ করেন, ‘গতকাল থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। তাঁর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। কারণ, ওই হত্যার সঙ্গে চেয়ারম্যানের (রহমতুল্লাহ) কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়ায় রহমতুল্লাহকে ঠেকাতে চার বছর পর ওই হত্যা মামলায় তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
২০২০ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি বাজারে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন নওশের আলী নামের এক সার ব্যবসায়ী। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। সেই হত্যা মামলায় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে রায়হান রহমতুল্লাহর নাম উঠে আসে।
মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, হরতালের ফলে কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় আছে। বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।
২০২০ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি বাজারে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন নওশের আলী নামের এক সার ব্যবসায়ী। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। সেই হত্যা মামলায় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে রায়হান রহমতুল্লাহর নাম উঠে আসে। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। গত রোববার তাঁর জামিনের মেয়াদ শেষ হয়। গতকাল জামালপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে জামিন আবেদন করেন তিনি। পরে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।