উপদ্রুত এলাকার মানুষ এখনো নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে।। আজ বেলা একটায় ফেনীর ফাজিলপুর রেল স্টেশন এলাকায়
উপদ্রুত এলাকার মানুষ এখনো নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে।। আজ বেলা একটায় ফেনীর ফাজিলপুর রেল স্টেশন এলাকায়

‘দয়া করে গাড়িতে তোলেন, আমার মা-বউয়ের খোঁজ পাচ্ছি না’

পাঁচ দিন ধরে ধরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। তাঁর বাড়ি ফেনীর নইরাসপুর গ্রামের এক প্রান্তে। বন্যার পানির প্রবল স্রোতের কারণে সাঁতরে তিনি সেখানে যেতে পারছেন না।

আলাউদ্দিনের সঙ্গে আজ শনিবার দেখা হয় মিরসরাইয়ে। তখন দুপুর ১২টা। ত্রাণবাহী ট্রাক বা মিনিট্রাকে ওঠার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু জায়গা পাচ্ছিলেন না। আবার মিরসরাই থেকে ভাড়ায় কোনো যানবাহনও চলছে না। ফলে তিনি ট্রাকের পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছিলেন। একপর্যায়ে এই প্রতিবেদক যে ত্রাণবাহী গাড়িতে যাচ্ছিলেন, সেই ট্রাকের সামনে এসে পড়েন আলাউদ্দিন। বলতে থাকেন, ‘ভাই, দয়া কইরা আমাকে গাড়িতে তোলেন। আমারে ফাজিলপুর নিয়া যান। পাঁচ দিন ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নাই।’

ফেনীর ফাজিলপুর রেলস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন। আজ দুপুর একটায়

গাড়িতে ওঠার পর আলাউদ্দিন জানান, পানি বেশি হওয়ার কারণে কোনোভাবেই বাড়িতে যেতে পারেননি। চার দিন ধরে তিনি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বাড়ি গ্রামের বেশ ভেতরে হওয়ায় কোনো নৌকাও যাচ্ছে না। আলাউদ্দিন বলেন, তাঁর মা ও স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন। বাড়িঘর ডুবে গেছে। কিন্তু যাওয়ার সুযোগ নেই।

আজ সারা দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ রকম অসংখ্য মানুষ দেখা গেছে, যাঁরা ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। কিছুটা হেঁটে, ত্রাণবাহী ট্রাকে চড়ে, আবার হেঁটে তাঁরা যাচ্ছিলেন গন্তব্যে। সবার মধ্যে ক্লান্তি ভর করেছিল।

সড়কে পাওয়া গেল আলাউদ্দিনের মতো আরও অনেককে। আবদুর রহিমের সঙ্গে কথা হয় বেলা দেড়টায়। তিনি সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। কিন্তু লালপোল এলাকায় গিয়ে আটকে যান। রহিম বলেন, তাঁর বাড়ি চট্টগ্রাম শহরে। স্ত্রী শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে আটকে যান। তিনি কোনোমতেই দুই দিন ধরে লালপোল পার হতে পারেননি।

এখনো নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ। আজ বেলা ১টায় ফেনী ফাজিলপুর রেল স্টেশন এলাকায়

আলাউদ্দিনের মতো রহিমও ভেঙে ভেঙে লালপোল পর্যন্ত গেছেন। তিনি জানান, বারইয়ারহাট থেকে দেড় ঘণ্টা হেঁটে একটা ত্রাণের গাড়িতে চেপে বসেন। ছাগলনাইয়ায় ঢোকার পর ট্রাকটি থেমে যায়। পরে আবার হাঁটা শুরু করেন। এরপর আরেকটি ত্রাণবাহী ট্রাকে উঠতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আবুল বাসার। তিনি বলেন, সোনাগাজীতে তাঁর পরিবার আটকে পড়েছে। কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না।

সড়ক এখনো অচল, থমকে আছে যানবাহন

চার দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল হয়ে আছে। মিরসরাই থেকে ফেনী সদরের লালপোল পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমটারে শত শত যানবাহন আটকা। রাজ্জাক মিয়া সড়কের পাশে বসে ভাত রান্না করছিলেন। তিনি জানান, তিন দিন ধরে বসে আছেন। কিছু চাল ছিল। তা রান্না করেছেন। লবণ দিয়ে ভাত খাবেন।

ঢাকাগামী একটি বাসে ৩০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। তার মধ্যে তিনটি শিশুও ছিল। যাত্রীরা বলেন, কী যে মুসিবত, তা বলে বোঝানো যাবে না। কয়েকজন যাত্রী গতকাল শুক্রবার রাতে হেঁটে রওনা দিয়েছেন। যতটুকু যেতে পারেন।

সড়কে বেশির ভাগ যানবাহনই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দিয়েছিল। কোনোটি ঢাকা যাবে, কোনোটি আরও দূরে। নবাব মিয়া নামের এক লরিচালক বলেন, বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন।