বরিশালে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আড়াই শ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
ফাইল ছবি

বরিশালে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ আওয়ামী লীগের আড়াই শ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, বোমার বিস্ফোরণ, ভোট ডাকাতি করে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর জয় ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে।

বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক মনিরুজ্জামান জামাল বাদী হয়ে গত রোববার কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় তিন শ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একই থানায় গতকাল মঙ্গলবার আরও দুটি মামলা করা হয়েছে।

আজ বুধবার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান তিনটি মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় বরিশাল সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান, আক্তার হোসেন, বরিশাল মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুয়াল হোসেন ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং বর্তমানে কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদারকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এই মামলায় বাদী মনিরুজ্জামান জামাল অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কাজী এনায়েত হোসেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের চাচাতো ভাই মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাই হওয়ার সুবাদে সাইদুর রহমান ওই নির্বাচনে  অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনী এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন। তাঁরা বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হত্যা-জখমের হুমকি দিয়ে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেন। পরে উপজেলার মকড়ুলো ইউনিয়নে সাইদুর রহমানের সব নির্বাচনী কার্যালয় আগুন দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করে তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে ভোট ডাকাতি করেন।

মামলার এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়, নির্বাচনের আগে যে ভোটারের জানাজায় সাইদুর রহমান অংশ নিয়েছেন, সেই ভোটারের ভোটও সিল মেরে শতভাগ ভোট গ্রহণ দেখানো হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা দুলাল তালুকদারের সঙ্গে সভা করে ৩০টি কেন্দ্রে বোমা ও অস্ত্রের ব্যবহার করে ব্যালটে সিল দিয়ে বাক্স ভর্তি করেছেন।
মামলার এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, দেশে মামলা করার পরিবেশ না থাকায় এত দিন মামলা করা হয়নি। বর্তমানে আইনের শাসন ও জীবনের নিশ্চয়তা থাকায় ন্যায়বিচার পেতে মামলা করা হয়েছে।

অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিএনপির নেতা–কর্মীদের মারধরের ঘটনায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় তিন শ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলার বাদী বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক সহশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফারজানা খান রোজী।  

ফারজানা খানের মামলায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য বিলুপ্ত বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ ২৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় আরও ৬০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মারধর, শ্লীলতাহানি, চুরি, হত্যার হুমকিসহ বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

অপর মামলার বাদী হলেন সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়ন বিএনপির জ্যেষ্ঠ  সহসভাপতি হাবিবুর রহমান। তিনি ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, মামলাগুলোর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।