কক্সবাজারের রামুতে মিয়ানমারের গরু পাচারে বাধা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন কৃষককে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামের পাহাড়ে নারাইম্মার ঝিরিতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কৃষকের নাম আবুল কাশেম (৪৫)। তাঁর বাড়ি বড়বিল গ্রামে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে স্থানীয় কাঠুরিয়ারা নারাইম্মার ঝিরিতে কাশেমের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পরিবারকে খবর দেন। দুপুরে রামু থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশ পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছে। তিনিও অভিযানে আছেন। কারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, কেন এই হত্যাকাণ্ড, তার অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
বেলা দুইটার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত আবুল কাশেমের ভাই মো. শহীদুল্লাহ বলেন, স্থানীয় ডাকাত দল শাহীন বাহিনীর ৪০-৪৫ জন সদস্য ভারী অস্ত্র নিয়ে গতকাল গভীর রাতে তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে আনা গরু পাচারে বাধা দেওয়ার কথা বলে সন্ত্রাসীরা তাঁর ভাই আবুল কাশেমকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর পাহাড়ের নারাইম্মার ঝিরিতে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ জঙ্গলে নিক্ষেপ করা হয়। আজ সকালে স্থানীয় কাঠুরিয়ারা ঘটনাস্থলে কাশেমের গুলিবিদ্ধ-রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে খবর দেন। এরপর পুলিশকে জানানো হয়। এ নিয়ে গত এক মাসে গর্জনিয়া ইউনিয়নে মিয়ানমারের গরু পাচারের ঘটনায় পৃথক গোলাগুলি ও সংঘর্ষে চার ব্যক্তি নিহত হন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত আবুল কাশেম কৃষিকাজের পাশাপাশি মোটরসাইকেলে ভাড়া টানেন। সম্প্রতি তিনি শাহীন বাহিনীর গরু পাচার কাজে বাধা দেন। মিয়ানমারের চোরাই গরু আনাতে স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন বলেই কাশেম গরু পাচারে বাধা দিয়েছিলেন।
আবুল কাশেমের স্ত্রী স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নিরাপত্তা দাবি জানান। সংসারে তাঁর চার বছরের একটি কন্যা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ এপ্রিল রাতে গর্জনিয়া ইউনিয়নের মিয়ানমারের থোয়াইংগাকাটা ঘোনারপাড়া এলাকায় চোরাই গরু পাচারকে কেন্দ্র করে দুটি ডাকাত দলের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে বাবা ও ছেলে নিহত হন। নিহত দুজন হলেন থোয়াইংগাকাটা এলাকার বাসিন্দা জাফর আলম (৫২) ও তাঁর ছেলে মো. সেলিম (৩৩)।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও রামু থানা-পুলিশ জানায়, ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে মিয়ানমারের চোরাই গরুর একটি বহর সীমান্ত পার করানোর জন্য শাহীন বাহিনীর ১৪-১৫ জন সদস্য উত্তর থোয়াইংগাকাটা মৌলভির ঘোনার একটি চায়ের দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে আবছার ডাকাত বাহিনীর ২০-২২ জন সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে শাহীন বাহিনীর ওপর হামলা চালান। দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির মধ্যে পড়ে দোকানের বাইরে অবস্থানরত জাফর আলম ও মো. সেলিম গুলিবিদ্ধ হন।
গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রামু থানায় হত্যা মামলা করা হলেও শাহীন বাহিনীর মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।