চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বহালের দাবিতে এবার আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কোটা বহাল না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এক মানববন্ধন থেকে তাঁরা এ দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশন শুরু করেছিলেন সাত শিক্ষার্থী। পরে তাঁরা কাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে অনশন প্রত্যাহার করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আশ্বাসে এই কর্মসূচি থেকে সরে আসেন। আগামী রোববারের মধ্যে পোষ্য কোটা বাতিল না করা হলে আবার অনশন করার ঘোষণাও দিয়েছেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আজ সকালে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। কোটা বহালের দাবিতে সম্প্রতি এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি আন্দোলন পরিচালনায় ১৪ সদস্যর একটি সমন্বয়ক দলও গঠন করা হয়েছে। কর্মসূচিতে পরিষদটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আলতাফ উল আলম বলেন, তিনি কোটা শব্দটি বলতে চান না। এটি তাঁদের অধিকার। তাঁরা এটি বহাল চান। প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, এটি বিবেচনা করে তাঁরা কর্মসূচি পালন করবেন। কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি না করে দাবি আদায় করবেন তাঁরা।
সংগঠনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সেলিম বলেন, তাঁরা শিক্ষার্থী কিংবা প্রশাসনের প্রতিপক্ষ নন। প্রচলিত কোটা বহালের দাবিতে তাঁরা দাঁড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ১৬৬টি ওয়ার্ড (পোষ্য) কোটা রয়েছে, সেটি যদি পূরণ না হয়, তাহলে খালি আসনগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। কোটা বাতিল কোনোভাবেই তাঁরা চান না। বরং সাধারণ আসনের পাশাপাশি কোটার আসনও বাড়ানো হোক, এটি তাঁদের চাওয়া।
এদিকে পোষ্য কোটা বাতিল না হলে আবার অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সদ্য অনশন থেকে সরে আসা সাত শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ, জুলাই আন্দোলনে গুলিতে এক চোখ হারানো বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শুভ হোসেন, ইতিহাস বিভাগের রাশেদ দিনার, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তানিম মুশফিক, আইন বিভাগের সাইদুল রহমান, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ হিমেল খান ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ সরকার।
জানতে চাইলে অনশনে থাকা মোহাম্মদ শুভ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। প্রশাসন রোববার কোটার বিষয়ে সভা করার কথা জানিয়েছে। যদি ওই দিন কোটার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা না পান, তাহলে আবার আন্দোলন যাবেন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রশাসনের কেউ এককভাবে নিতে পারে না। তিনিও শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে। রোববার কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভা রয়েছে। এ সভায় এটি নিয়ে আলোচনা করা হবে। বিষয়টি সমাধানের জন্য তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটা বাতিলের আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ২৯ ডিসেম্বর। ওই দিন শিক্ষার্থীরা এই কোটা বাতিল, আবেদন ফি কমানো, চাকসু নির্বাচন দেওয়াসহ ৯ দাবিতে মানববন্ধন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে এই কর্মসূচি হয়। আন্দোলনের একপর্যায়ে ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে প্রশাসন দাবি না মানায় গত রোববার আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে সোমবার শিক্ষার্থী, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে আবার বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই বৈঠকে পোষ্য কোটা বাতিল না করে কমানোর সিদ্ধান্তের কথা শিক্ষার্থীদের জানানো হয়। পরে ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিরা এতে সম্মতি দেন। তবে এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে গত মঙ্গলবার থেকে আবার আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের জন্য তাঁরা চেষ্টা করছেন।