লঘুচাপের মধ্যেই সাগর থেকে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছেন কক্সবাজারের জেলেরা। শহরের ফিশারিঘাটের পাইকারি মাছের বাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্র চড়া দামে বেচাবিক্রি হচ্ছে ইলিশ। সেখান থেকে কিনে ট্রাকবোঝাই করে রুপালি ইলিশ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার হাটবাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জেলেরা জানান, লঘুচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। যে কারণে ছোট আকৃতির নৌযানগুলো সাগরের ৭০-৯০ কিলোমিটার গভীরে পৌঁছে ইলিশ ধরতে পারছে না।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, লঘুচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর এলাকায় দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা ফিশারিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ নিয়ে ঘাটে ভিড়েছে ৩৫টির বেশি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ ইলিশ। জেলেরা ট্রলারের ইলিশ ডিঙিনৌকায় তুলে বাজারে নিয়ে আসছেন।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কয়েকটি স্তূপে অন্তত পাঁচ হাজার ইলিশ দেখা যায়। বেশির ভাগ ইলিশের ওজন ৭০০-৯০০ গ্রাম। বাজারে ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ (পাইকারি) বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ১০০ টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ১ কেজির বড় ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকায়।
সকালে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০টি ইলিশ বিক্রি করে প্রায় ১১ লাখ টাকা পেয়েছেন এফবি সলিম নামে একটি ট্রলারের জেলেরা। ট্রলারটির মালিক শহরের নুনিয়াছটার ব্যবসায়ী সলিম উল্লাহ। তিনি বলেন, ২১ জন জেলে নিয়ে ১০ দিন আগে ট্রলারটি ৬০ কিলোমিটার দূরে জাল ফেলে। প্রথম দুই দিন ইলিশ ধরা পড়েছে খুবই কম। এরপর আরও ১০-১৫ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে জাল ফেললে ৭০০ ইলিশ ধরা পড়ে। আরও গভীর সাগরে জাল ফেলা গেলে ইলিশ আরও বেশি ধরা পড়ত। তবে সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় ইলিশ না ধরে ট্রলার নিয়ে জেলেরা ঘাটে ফিরে এসেছেন।
একই সময়ে ৯৫০টি ইলিশ বিক্রি করে ৯ লাখ টাকা পেয়েছেন এফবি আল্লাহর দান ট্রলারের জেলেরা। ট্রলারটি মাঝি (সারেং) কলিম উল্লাহ (৫৫) বলেন, বৈরী পরিবেশে সাগর উত্তাল না হলে জালে হাজারো ইলিশ ধরা পড়ত। এখনো ইলিশ ধরতে সাগরের সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলে কয়েক শ ট্রলার রয়ে গেছে।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজার ফিশারিঘাট মৎস্য ঐক্য সমবায় সমিতির সদস্যরা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে ইলিশ কিনে ট্রাকে বোঝাই করে সরবরাহ করছেন ঢাকা, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তিনটি ট্রাকে ঢাকায় সরবরাহ হয়েছে ৫১ মেট্রিক টন ইলিশ। ব্যবসায়ীরা জানান, গত দুই দিনে সাতটি ট্রাকে সরবরাহ হয়েছে আরও ১১০ মেট্রিক টন ইলিশ।
ইলিশ ব্যবসায়ী ও মৎস্য ঐক্য সমবায় সমিতির প্রধান উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন বলেন, অধিকাংশ ইলিশ রাজধানীর রামপুর, আবদুল্লাহপুর, গাজীপুর, নিউমার্কেট এলাকায় বেচাবিক্রি হয়। কিছু ইলিশ রাজশাহী, সিলেট ও মাওয়াঘাটে সরবরাহ হচ্ছে।
মৎস্য ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি ও ট্রলার মালিক ওসমান গণি বলেন, গত ২৩ জুলাই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও জেলেরা সাগরে নামতে পারেননি লঘুচাপ-নিম্নচাপ থাকার কারণে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ৮-১০ দিন আগে জেলার কয়েক হাজার ট্রলার নিয়ে ইলিশ ধরতে সাগরে নামেন। ইলিশ ধরতে কোনো কোনো ট্রলারের ৯-১২ দিন সময় লাগে। ইলিশ ধরার মুহূর্তে সাগরে গতকাল থেকে আবার লঘুচাপ দেখা দিয়েছে। যেসব ট্রলার ঘাটে ফিরে আসছে, সব ট্রলারে ২০০ থেকে দেড় হাজার ইলিশ রয়েছে।
সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় ইলিশ ধরতে যাওয়া আরও ২ হাজার ট্রলার ঘাটে ফিরে আসছে জানিয়ে কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে সাগরে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেরা আর্থিক সংকটে রয়েছেন। বৈরী পরিবেশেও কিছু ট্রলারের জেলেরা উপকূলের কাছাকাছি থেকে ইলিশ ধরে অভাব দূর করার চেষ্টা করছেন। জেলাতে ছোট-বড় ৬ হাজার ট্রলারে জেলে-শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার।