ফিরে দেখা ২০২২: ফরিদপুর অঞ্চল

দৃশ্যপটের বাইরে প্রতাপশালী খন্দকার মোশাররফ

বিভাগীয় সমাবেশ সফল করে বিএনপি ফরিদপুরে তাদের শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছে।

বিদায়ী ২০২২ ফরিদপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য ছিল ঘটনাবহুল ও নাটকীয়। ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতার রাজনীতিতে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হিসেবে আবির্ভূত হওয়া খন্দকার মোশাররফ দৃশ্যপট থেকে ছিটকে পড়েন। ছয় বছর পর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও সাত মাসেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি। বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হলেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। তবে বিভাগীয় সমাবেশ সফল করে বিএনপি ফরিদপুরে তাদের শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছে।

পর্দার অন্তরালে খন্দকার মোশাররফ

ফরিদপুরের রাজনীতিতে এ বছর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি থেকে খন্দকার মোশাররফের ছিটকে পড়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এরপর ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। এ সময় তাঁর অনুগতরা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার উন্নয়নকাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও জমি দখল করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দলের মধ্যেও বিরুদ্ধাচরণের কোনো সুযোগ ছিল না।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে খন্দকার মোশাররফ মন্ত্রী হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হলেও মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি মোশাররফের। তবে তাঁকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা করা হয়। গত ১২ মে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্যের পদ খোয়ান তিনি। সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে উপদেষ্টা সদস্যের পদটিও হারান তিনি।

এর আগে ২০২০ সালের ৭ জুন ফরিদপুরে খন্দকার মোশাররফের বাড়িতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর দুই দিন পর খন্দকার মোশাররফ ঢাকায় চলে যান। ওই বছরের ১৪ জুলাই ও ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এক দিনের জন্য ফরিদপুরে যান মোশাররফ। এরপর তাঁকে আর নিজের নির্বাচনী এলাকায় দেখা যায়নি। এ বছরের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বিদেশে চলে যান তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কমিটি

দীর্ঘ ছয় বছর পর গত ১২ মে হয় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনে শামীম হককে সভাপতি ও শাহ মো. ইশতিয়াককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এক মাসের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে বলা হলেও সাত মাসেও তাঁরা পারেননি।

দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর গত ১৫ এপ্রিল জেলা বিএনপির ১৯ সদস্যবিশিষ্ট ও ফরিদপুর মহানগর বিএনপির ১৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে সৈয়দ মোদাররেছ আলীকে ও সদস্যসচিব করা হয়েছে এ কে কিবরিয়াকে। এ ছাড়া মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে এ এম এম কাইয়ুমকে ও সদস্যসচিব করা হয়েছে গোলাম মোস্তফাকে।

ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশ

দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলেও গত ১২ নভেম্বর সফলভাবে বিভাগীয় সমাবেশ করে বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় কমিটি। গণসমাবেশের জন্য সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মাঠ চাইলেও প্রশাসন শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউট–সংলগ্ন মাঠে অনুমতি দেয়। সম্মেলনের আগে শহরসহ উপজেলাগুলোতে পুলিশের ধরপাকড়, পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট, এমনকি বিআরটিসির বাস বন্ধ করেও সমাবেশের লোক সমাগম ঠেকানো যায়নি।

দখিন দুয়ার খোলা

২৫ মে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে যায় দখিনা দুয়ার। এ অঞ্চলের লাখো মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটে। এ সেতু দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে সারা বাংলাদেশের সংযোগের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ফরিদপুর থেকে আগে ঢাকা যেতে যেখানে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা সময় লাগত, বর্তমানে সেখানে দুই ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকা পৌঁছানো যাচ্ছে। ব্যবসায়ীর লাভবান হচ্ছেন তাঁদের পণ্য অতি সহজে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন বলে। বিদেশি উদ্যোক্তারা এই অঞ্চলের আসার সুযোগ পাচ্ছেন এ সেতুর কল্যাণে। পদ্মা সেতু ঘিরে এ অঞ্চলে একটি অর্থনৈতিক পরিকাঠামো গঠিত হবে এবং তার মাধ্যমে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে এই অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা।