মৌলভীবাজারে খামারির ফাঁদে ধরা পড়ল বনবিড়াল

ফাঁদে আটকা পড়া বনবিড়াল। শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মাতারকাপনে
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারে খামারির পাতা ফাঁদে একটি বিপন্ন প্রজাতির বনবিড়াল ধরা পড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের মাতারকাপনে নজরুল ইসলামের মুরগির খামারে প্রাণীটি ধরা পড়ে। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে বনবিড়াল আটকের খবরটি জানানো হয়েছে। তারা আজ শনিবার ওই বাড়ি থেকে বনবিড়ালটি উদ্ধার করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছে।

খামার মালিক, বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম প্রায় বছরখানেক আগে মুরগির এই খামারটি করেছেন। প্রায় দিনই সন্ধ্যার পরে একটি বন্য প্রাণী তাঁর খামারের মুরগিদের বিরক্ত করে আসছিল। প্রাণীটি মুরগির ওপর হামলা করার চেষ্টা করত। কিন্তু পোষা কুকুরের কারণে মুরগি নিয়ে যেতে পারছিল না। খামারমালিক এই বন্য প্রাণীটিকে আটক করতে গত শুক্রবার একটি লোহার তৈরি খাঁচা দিয়ে ফাঁদ তৈরি করেন। সেই ফাঁদেই রাতে ধরা পড়ে বন্য প্রাণীটি। দেখা যায়, এই বন্য প্রাণীটি প্রকৃতিতে বিলপ্তির পথে থাকা একটি বনবিড়াল। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে খবরটি জানান খামারমালিক।

খামারমালিক মো. নজরুল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বনবিড়ালটি গতকাল রাত ১১টার দিকে খাঁচায় ধরা পড়েছে। এটি দেখতে বেশি বড় না।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বনবিড়াল ধরা পড়ার খবর পেয়েছি। ওদের সঙ্গে (খামারমালিক) কথা হয়েছে। আজ বিকেলে ওই বাড়ি থেকে বনবিড়ালটি উদ্ধার করে ওই এলাকাতেই সন্ধ্যার দিকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ওই দিকে বিলঝিল আছে, ওর (বনবিড়াল) জন্য ওই পরিবেশই ভালো হবে।’

বিলুপপ্তির ঝুঁকিতে থাকায় প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন বনবিড়ালকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখি ও বন্য প্রাণী গবেষক শরীফ খান তাঁর ‘বাংলাদেশের পাখি ও বন্য প্রাণী’ গ্রন্থে বনবিড়াল সম্পর্কে লিখেছেন, বনবিড়াল (jungle cat) বাংলাদেশের এক তুখোড় শিকারি বন্য প্রাণী। এক লাফে প্রায় ৭ থেকে ১০ ফুট দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। গাছে ভালো চড়তে পারে। এর শরীরের রং ছাই-বাদামি, জায়গায় জায়গায় হালকা হলুদাভ আভা আছে। লেজে কালো কালো বলয় আছে। সামনের দুই পায়ে আছে কালো কালো আড়াআড়ি টান। লেজের মাথা কালো। পোষা হাঁস-মুরগিসহ নানানরকম পাখি ও পাখির ডিম, পাখির বাচ্চা, ইঁদুর-ব্যাঙ ইত্যাদি ওরা খায়। বিষাক্ত সাপকেও বেজির মতো কৌশল খাটিয়ে মেরে ফেলতে পারে। বাংলাদেশে এই প্রাণীটি একসময় প্রচুর ছিল বন-জঙ্গলে। এখন কমে গেছে। ধানখেতের ইঁদুর খেয়ে ওরা কৃষকের প্রচুর উপকার করে। আলুখেতের ইঁদুরসহ আখখেতের মাজরা পোকা ওরা খায়। ক্ষতির চেয়ে উপকার বেশি করে। দিনে ঘুমায়। রাতে চরে বেড়ায়। সুযোগ পেলে দিনেও শিকার করে। বনবিড়াল বছরে তিন থেকে পাঁচটি করে তিনবার বাচ্চা দিয়ে থাকে। দুই মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চারা মায়ের সঙ্গে শিকারে বেরোবার অনুমতি পায় না।