চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ মোকাম। ধান কিনে বস্তায় ভরে তা চালকলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ মোকাম। ধান কিনে বস্তায় ভরে তা চালকলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে

চালের বাজার

খুচরায় আরও বেড়েছে দাম

চুয়াডাঙ্গায় মোকামে ধান-চালের দাম নিম্নমুখী হলেও ভোক্তা পর্যায়ে চালের দাম বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় খুচরা পর্যায়ে দাম কমছে না বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন। গতকাল শনিবার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ মোকাম এবং জেলা শহরের চালপট্টি, নদীরধার বাজার, নতুন বাজার ও ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে চালের দামের এই বিপরীতমুখী চিত্র পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশজুড়ে অভিযান শুরুর পর চুয়াডাঙ্গার মোকামগুলোয় ধান-চালের দাম কমতে শুরু করেছে। এই কারণে ১০ দিনের ব্যবধানে জেলার বিভিন্ন মোকামে ধানের দাম কেজিতে ২ টাকা ও চালের দাম কেজিতে দেড় থেকে ২ টাকা কমেছে। তবে খুচরা পর্যায়ে তেমন তদারকি না থাকায় চালের দাম কেজিতে চার–পাঁচ টাকা বেড়েছে।

গতকাল চুয়াডাঙ্গার নদীরধার বাজার ও ফেরিঘাট এলাকায় আড়তদার, খুচরা দোকানদারসহ অন্তত ২০ জন ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। খুচরা দোকানগুলোয় প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৫০ টাকা, ব্রি-২৮ চিকন চাল ৫২, মিনিকেট চাল ৬৮ ও বাসমতি চাল ৭২–৭৪ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। ভোক্তাদের কেউ বস্তা হিসেবে আড়ত থেকে এবং আবার কেউ কেজি হিসেবে খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনে থাকেন।

রিকশাচালক রমজান আলী জানান, সংসারে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি চাল লাগে। তিনি বলেন, ‘চাল-ডালসহ সব জিনিসের দাম য্যারাম বাড়চে, আয়-ইনকাম তো স্যারাম বাড়চে না। তাই কুনুদিন চাল কোম, আবার কুনুদিন তরকারি কোম কিনতি হচ্চে।’ নদীরধার বাজারের খুচরা বিক্রেতা মাসুম আলী দাম বাড়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আড়ত থেকে বস্তা ধরে কেনার ওপর প্রতি কেজি এক থেকে দুই টাকা লাভে খুচরা বিক্রি করে থাকি।’

গতকাল আড়তগুলোয় প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৪৮-৪৯ টাকা, ব্রি-২৮ চাল ৫১-৫২, মিনিকেট চাল ৬৬-৬৭ ও বাসমতি চাল ৭০–৭২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ফেরিঘাট এলাকার সুগন্ধা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি চালের আড়তের ব্যবস্থাপক আলমগীর হাসানের ভাষ্যমতে, ১০ দিন আগে প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল ৪৪–৪৫ টাকা, ব্রি-২৮ চাল ৫০, মিনিকেট চাল ৬১–৬২ ও বাসমতি চাল ৬৬–৬৮ টাকায় পাইকারি বিক্রি হয়েছিল। সে হিসাবে ১০ দিনের ব্যবধানে মানভেদে চালের দাম কেজিতে ৪–৫ টাকা বেড়েছে।

আলমগীর দাবি করেন, মোকামে দাম কমার প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে খুব একটা পড়েনি। কারণ, হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা সরাসরি মিলারদের কাছ থেকে চাল কিনে বিক্রি করে থাকি। মিলাররা আমাদের বলছেন, বাজারে ধান পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি দাম দিয়ে ধান কিনে চাল তৈরি করছেন। তাই দাম বাড়ছে।’

গত শুক্রবার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ মোকামে গিয়ে ধান ও চালের দাম নিম্নমুখী দেখা যায়। এই সময় সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের আশানন্দপুর গ্রামের কৃষক মারেফত আলী বলেন, ‘একবার পাঁচ বিঘা জমিতে চিকন ধান চাষ করেছি। ১০ দিন আগে ১ হাজার ২৭০ ট্যাকা মণ দরে ধান বিক্রি করিলাম। আইজ ১ মণে ৭০ ট্যাকাই নেই। ১০ মণ ধানে ৭০০ ট্যাকা কম। ভাবতিই মন খারাপ হয়ে যাচ্চে।’

একই বাজারে কথা হয় সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের ধানচাষি শাহিন বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনিও হাটে আনা ধান বিক্রি করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। শাহিন বিশ্বাস বলেন, ‘এবেড্ডা (এবার) তিন বিগে জমিতি স্বর্ণ ধান আবাদ করিচি। গত হাটে (সোমবার) ১ হাজার ২৮০ ট্যাকা মণ দরে বিক্রি কইরেলাম। আজগে বলচে সুমান সুমান। ১ হাজার ২০০ ট্যাকা মণ।’ তিনি আরও জানান, ধান বিক্রি করে বাড়ি গিয়ে অন্যের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। তাই কিছুক্ষণ দেখবেন। দাম বেশি না পেলে বাধ্য হয়েই কম দামে বিক্রি করবেন।

সরোজগঞ্জ মোকামের চালকলমালিক জহুরুল ইসলামের ভাষ্য, সরকারি উদ্যোগে সারা দেশে মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযানের কারণে মিলারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আগে প্রতিদিন ১৫০–২০০ বস্তা (প্রতি বস্তায় ২৫ কেজি) চাল বিক্রি হলেও তা কমে এখন ২০–৩০ বস্তায় নেমেছে।

জেলা বাজার তদারকি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, বাজার তদারকি করায় মোকামগুলোয় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা এ প্রসঙ্গে বলেন, কেউ যাতে ধান-চালের অবৈধ মজুত গড়তে না পারে এবং সিন্ডিকেট বা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেদিকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।