কুষ্টিয়ার কুমারখালীর একটি মসজিদে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ তহবিল সংগ্রহে অনিয়ম ও কমিটি নিয়ে অভিযোগ তোলায় দুই পক্ষের মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুজন আহত হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে তুলে নিয়ে পুনরায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ওই রোগীর সঙ্গে উপস্থিত তাঁর ভাগনেকেও ব্যাপক মারধর করা হয়।
উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর জামে মসজিদে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর প্রথম দফা মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে ওই দিনই বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় দ্বিতীয় দফা মারধরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামের জ্যোতি প্রামাণিকের ছেলে ফরিদ হোসেন (৪০), একই এলাকার মো. আলতু শেখের ছেলে সোহাগ হোসেন (১৮) এবং হাসিমপুর গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে আরিফ হোসেন (৪০)। সোহাগ ফরিদের ভাগনে এবং একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র। আরিফ স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
হাসপাতাল, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হাসিমপুর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন মো. আইনুদ্দিন শেখ (৬৫)। গতকাল জুমার নামাজ শেষে মসজিদে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ তহবিল সংগ্রহ ও মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন স্থানীয় বিএনপি কর্মী আরিফ হোসেন। এ সময় ফরিদ হোসেনসহ সভাপতি আইনুদ্দিনের লোকজন আরিফকে পিটিয়ে আহত করেন। পাল্টা হিসেবে আরিফ ফরিদের মাথা ফাটিয়ে দেন। পরে স্বজনেরা ওই দুজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে আরিফের লোকজন আহত ফরিদ ও তাঁর ভাগনে সোহাগকে তুলে কমপ্লেক্স চত্বরে অবস্থিত মসজিদের সামনে ব্যাপক মারধর করেন। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছুটে গেলে হামলাকারীরা ফরিদকে রেখে সোহাগকে ধরে নিয়ে থানা মোড়ে একটি চায়ের দোকানে নেন। সেখানে পুনরায় কয়েক দফা মারধর করে তাঁকে বসিয়ে রাখেন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফোন পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সোহাগকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। চিকিৎসক সোহাগকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন। আর নিরাপত্তার অভাবে সেখান থেকে ‘রেফার্ড’ নিয়ে ফরিদকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা।
নিরাপত্তার অভাবে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ‘রেফার্ড’ নিয়ে ফরিদকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা।
চায়ের দোকানদার নাসির উদ্দিন বলেন, বন্ধ দোকান খুলতে গিয়ে তিনি দেখেন, তাঁর দোকানের সামনে অনেক লোকজনের ভিড়। দেখেন, ‘চোর চোর’ বলে একজনকে মারধর করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে সেনাবাহিনী এলে সবাই দৌড়ে পালিয়ে যান।
কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১ নম্বর কেবিনে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরিফ হোসেন। তাঁর মাথায় ব্যান্ডেজ করানো হয়েছে। তিনি বলেন, মসজিদে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ তহবিল সংগ্রহে অনিয়ম ও কমিটি নিয়ে কথা বলায় সভাপতির লোকজন তাঁকে দেশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছেন। ঘটনার উত্তেজনায় তিনিও ফরিদকে পিটিয়েছিলেন। তবে হাসপাতাল থেকে ফরিদকে কারা তুলে নিয়ে মারধর করেছে, তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। আরিফ থানায় মামলা করবেন বলে জানালেন।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন ফরিদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদে আরিফ তাঁকে মেরে মাথা ফাটিয়েছেন। আবার হাসপাতালে আরিফের লোকজন তাঁকে ও তাঁর ভাগনে সোহাগকে তুলে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেছেন। তিনি থানায় মামলা করবেন।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে ফরিদ ও সোহাগকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।