নীলফামারীর সৈয়দপুরের রেলঘুমটি এলাকায় বসেছে বরইয়ের বড় বাজার। ডালি, কার্টন আর টুকরিতে থরে থরে সাজানো থাকে নানা জাতের বরই। বউ সুন্দরী, কাশ্মীরি সুন্দরী, সূর্যমুখী, বাউ কুল, আপেল কুল, নারকেল কুল—এমন বাহারি নামের বরইয়ে ভরা বাজার এটি।
এই মৌসুমে এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। প্রতিদিন দুই লাখ টাকার বরই বেচাকেনা হয় বলে বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানালেন। দূরদূরান্ত থেকে পাইকারেরা এসে নিয়ে যান এসব বরই।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিরবন্দর, রংপুরের তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, বগুড়ার সান্তাহার, পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোরসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে রেলঘুমটি এলাকার বাজারে বরই আসছে। রংপুর বিভাগের ব্যবসার কেন্দ্র সৈয়দপুর। এ কারণে ওই সব এলাকার চাষি ও ব্যবসায়ীরা সঠিক দাম পেতে এবং অল্প সময়ে বিক্রির জন্য ট্রাক, পিকআপ, নছিমন, রিকশা–ভ্যান ও ট্রেনে বরই নিয়ে আসছেন সৈয়দপুরে।
আজ শনিবার বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, আশপাশের চাষিরা বরই আনছেন ভ্যান ও পিকআপে করে। প্রতিদিন প্রচুর কেনাবেচা হয় সৈয়দপুরের মৌসুমি ওই বরইয়ের আড়তে। শহরের ১ নম্বর রেলঘুমটির পাশেই গড়ে ওঠা ওই বাজারে গত বছরের তুলনায় এ বছর তুলনামূলক বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। বরইয়ের প্রকারভেদে নির্ধারণ করা হচ্ছে দাম। ভালো জাতের বরই প্রতি মণ ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। এখানে সর্বনিম্ন ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ পর্যন্ত পাইকারি পাওয়া যায়। আর খুচরা বিক্রেতারা সেই কার্টন বা ঝুড়ির বরই বিক্রি করছেন গড়ে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১৫০ টাকায়।
রংপুরের তারাগঞ্জ থেকে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সৈয়দপুরের বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিনই এখানে নিজের বাগানের বরই নিয়ে আসি। বরইয়ের আকার হিসেবে প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। তবে এখানে যাঁর দোকানের সামনে অস্থায়ী বাজার, তাঁরা শতকরা ১০ টাকা করে আদায় করেন। ১৪ হাজার টাকার বরই বিক্রি করেছি, যার মধ্যে ১ হাজার ৪০০ টাকা দিতে হয়েছে। তা ছাড়া পৌরসভার টোল তো আছেই।’
এ বিষয়ে হাজি গরিবুল্লাহ ফল ভান্ডারের জনি বলেন, সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘ্নে বেচাকেনা করতে পারেন, সেটা দেখভাল করার জন্য কয়েকজন লোক রাখা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে শতকরা ১০ টাকা করে নেওয়া হয়।
নাদিম ও হাসান নামের দুই আড়তদার বলেন, গতবারের তুলনায় চলতি মৌসুমে তিন গুণের বেশি বরই তাঁদের আড়তে এসেছে। বরইয়ের আমদানি যেমন বেড়েছে, ক্রেতারও কমতি নেই। প্রতিদিন এখানে দুই লাখ টাকার বরই বেচাকেনা হয় বলে তাঁদের ধারণা।