জামালপুরে বুড়িমার দোকানের কাঁচা গোল্লা, রসগোল্লা ও প্যারার সুনাম মানুষের মুখে মুখে। শহরের রানীগঞ্জ বাজার এলাকায়
জামালপুরে বুড়িমার দোকানের কাঁচা গোল্লা, রসগোল্লা ও প্যারার সুনাম মানুষের মুখে মুখে। শহরের রানীগঞ্জ বাজার এলাকায়

জামালপুরে ৭৬ বছর ধরে প্রিয় ‘বুড়িমার মিষ্টি’

স্বাদে আর মানে জামালপুরের মানুষের কাছে প্রিয় এক নাম ‘বুড়িমার মিষ্টি’। ৭৬ বছরের ব্যবসা তাদের। মিষ্টিপ্রিয় মানুষের কাছে এই দোকানের কাঁচাগোল্লা, রসগোল্লা, প্যারাসহ বিভিন্ন মিষ্টির অনেক সুনাম। সেই সঙ্গে তাদের দোকানের দই লোকজন বেশ পছন্দ করেন। এই মিষ্টির কদর শুধু জেলাজুড়েই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকজনও এখান থেকে দই-মিষ্টি নিয়ে যান।

জামালপুর জেলা শহরের রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় ‘মা মিষ্টান্ন ভান্ডার’ দোকানটির অবস্থান। তবে সবাই দোকানটিকে বুড়িমার মিষ্টির দোকান হিসেবেই চিনেন। যাঁর হাত ধরে এই মিষ্টি ব্যবসার শুরু, তাঁর নাম অমলাবালা সাহা। তাঁকে সবাই বুড়িমা বলতেন, সেভাবেই তাঁর দোকান পরিচিত হয় বুড়িমার মিষ্টির দোকান হিসেবে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুড়িমার এই মিষ্টির দোকানের শুরু ৭৬ বছর আগে। অমলাবালা সাহা মানিকগঞ্জের বালিয়াটি থেকে বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে জামালপুরে এসেছিলেন। স্বামী শম্ভুনাথ সাহার ছোট আকারের কাপড়ের ব্যবসা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলত না। পরে অমলাবালা দই-মিষ্টি বানানো শেখেন। প্রথমে তিনি ছোট পরিসরে দই-চিড়া ও মিষ্টির দোকান দেন। লোকজন তাঁর বানানো দই-মিষ্টি বেশ পছন্দ করেন। এরপর লোকমুখে তাঁর দোকানের প্রচার-প্রসার বাড়তে থাকে। অমলাবালা সাহা ২০০৪ সালে মারা যান। তাঁর দুই ছেলে মারা গেছেন। বড় ছেলে নারায়ণ চন্দ্র সাহার ছেলে সুমন কুমার সাহা এখন ব্যবসা দেখভাল করেন।

জামালপুরের মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ৭৬ বছর ধরে চলছে বুড়িমার মিষ্টি। ছানার তৈরি এই মিষ্টির স্বাদ ও মান অনন্য হওয়ায় চাহিদাও বেশি। বুড়িমার মিষ্টি ব্যবসার মূলমন্ত্র ছিল সততা আর মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার। বুড়িমা নিজেই মিষ্টি বানাতেন, ক্রেতা সামলাতেন এবং ব্যবসার হিসাবও রাখতেন। তাঁর পরিশ্রমে গড়া মিষ্টির দোকানটি এখনো ক্রেতাদের কাছে আস্থার নাম।

বুড়িমার মিষ্টির দোকান নিয়ে কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, বুড়িমার দোকানের মিষ্টি এ জেলার ঐতিহ্য। শহরে বহু মিষ্টির দোকান গড়ে উঠেছে। কিন্তু বুড়িমার দোকানের কাঁচাগোল্লা, রসগোল্লা, প্যারা ও দইয়ের স্বাদ অনন্য। বহু বছর ধরে তারা এই স্বাদ ধরে রেখেছে। সামাজিক অনুষ্ঠান ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে বুড়িমার দোকানের মিষ্টি না হলে যেন পূর্ণতা আসে না।

দোকানের পুরোনো কর্মচারী রামচন্দ্র বসাক বলেন, ‘আমি বুড়িমার সময় থেকে কাজ করে যাচ্ছি। বুড়িমা নিজ হাতে আমাকে মিষ্টি বানানো শিখিয়েছেন। আগে যেভাবে মিষ্টি তৈরি করতাম, এখনো সেভাবেই মিষ্টি বানাই। মিষ্টির গুণগত মান ও স্বাদ আগের মতোই আছে।’

অমলাবালার নাতি ও দোকানের বর্তমান স্বত্বাধিকারী সুমন কুমার সাহা বলেন, ‘আমার ঠাকুর মার স্মৃতি ধরে রাখতে এখনো ব্যবসাটি চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মিষ্টির দোকানটি ছোট হলেও মিষ্টির মান ও স্বাদের কারণে মানুষের মুখে মুখে সুনাম। এই সুনাম এক দিনে হয়নি। ঠাকুর মার সততা, ত্যাগ, মিষ্টির স্বাদ ও গুণগত মান ধরে রাখার চেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। ক্রেতারা যে আমাদের বিশ্বাস করেন, সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা না করাই আমাদের ব্যবসার সাফল্য।’