মাদারীপুরে অসহায় বৃদ্ধ জয়নাল-রাশিদা দম্পতির মুখে হাসি ফুটেছে। জেলা পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম তাঁদের খাদ্যসামগ্রী ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘বয়স্ক ভাতা পাইলাম না, মরলে স্ত্রী বিধবা ভাতা যদি পায়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরই বিভিন্ন মহল থেকে বৃদ্ধ এই দম্পতিকে সহযোগিতার কথা জানানো হয়।
গতকাল রাতে পুলিশ সুপার মাসুদ আলম মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের আদমপুরে নির্মিত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এলাকায় পুলিশ রাশিদার ঘরে হাজির হন। রাশিদার অসুস্থ স্বামী যে বিছানায় সারা দিন শুয়ে থাকেন, সেখানে বসে পুলিশ সুপার বৃদ্ধ দম্পতির আক্ষেপের কথা শোনেন। সেই সঙ্গে জয়নাল ব্যাপারীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তিনি। রোজার এক মাস চলার জন্য চাল, ডাল, তেল, চিনি, ছোলা, মুরগি, গরুর মাংসসহ ১৫ পদের খাদ্যসামগ্রী রাশিদার হাতে তুলে দেন। জয়নালের ওষুধপত্র কেনার জন্য তাঁর হাতে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন।
এসব পেয়ে আনন্দে কান্না করে দিলেন রাশিদা বেগম। তিনি বললেন, ‘আইজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) তারাবিহর নামাজের দিন, এত কিছু নিয়া কেউ আমাগো ঘরে আইবো, তা ভাবি নাই। কখনো মনে করি নাই আল্লায় এই ঘরে এত কিছু দিয়া কাউরে পাঠাইবো। আইজ আমি খুশি হইছি। সকালে হুদা লবণ দিয়া ভাত খাইয়া কামে গেছি। সন্ধ্যায় কত কিছু ঘরে আমার। আইজ কাম শেষে এক শ টাকা পাইছি। সেই টাকা দিয়া বাজারে তেল কিনতে গিয়াও ফিরা আইছি, এক শ টাকা দিয়া স্বামীর জন্য ডিম, ডাইল আর ওষুধ আনছি। এত কষ্টে ছিলাম আমরা। আইজ আমার ঘরে তিন বোতল তেল, চাল, ডাল, মাংস—সব আছে। রোজার মাসে আর কষ্ট হইব না। আম্মেগো ঋণ কখনো ভুলবো না।’
রাশিদার স্বামী জয়নাল ব্যাপারী বলেন, ‘জীবনটা আমাগো কষ্টের এইডা মাইনা নিছি। এত কষ্টের মধ্যেও এমন দিনে স্যার আমাগো খবর নিব, আমার পাশে বসব, তা স্বপ্নেও ভাবি নাই।’
পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘অসহায় বৃদ্ধ দম্পতির খবরটা পড়ার পর চোখে পানি চলে এল। ছেলেমেয়ে থাকার পরও কত কষ্টের মধ্যে তাঁদের জীবন। রাশিদার রোজ এক শ টাকা রোজগার দিয়া কত লড়াই করছেন তাঁরা। এসব কিছু ভাবতে অবাক লাগে। পরিবারটি পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজের ভালো লাগছে। অসহায় পরিবারটি যেন সব ধরনের ভাতার কার্ড পায়, সেই ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলব।
জয়নাল-রাশিদা দম্পতির বসবাস ছিল মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের মোবারকদি এলাকায়। তাঁর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। নিজের কোনো জমি না থাকায় ছেলেমেয়েদের ঘরে আর ঠাঁই হয়নি জয়নাল ও রাশিদার। প্রায় ছয় মাস আগে ভূমিহীন এই বৃদ্ধ দম্পতিকে আশ্রয় দিয়েছে সরকার। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে রাশিদা বেগমের নামে সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের আদমপুর এলাকায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে নির্মিত দেড় শতাংশ জমির একটি পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। তবে ঘর ছাড়া আর কোনো সহযোগিতা জোটেনি রাশিদার। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে পড়েছেন মহাবিপদে। এই দম্পতি যেখানে থাকেন, সেখান থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে একটি ধানভাঙা মিলে রোজ ১০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন রাশিদা।