রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন, আজ চাঁদা নিতে টেবিল পেতে বসেনি কেউ

প্রশাসন ভবনে ব্যানার ঝুলিয়ে টেবিল চেয়ার পেতে টাকা নেন ছাত্রলীগের নেতা– কর্মীরা। সোমবার দুপুরে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বিদায়ী ছাত্রদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ঘটনায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর ফলে চাঁদা তুলতে আর টেবিল পেতে বসেনি কেউ। আজ প্রায় ৩০০ ছাত্র নির্বিঘ্নে তাঁদের পুরো টাকা নিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন পত্রিকায় ছাত্রলীগের টাকা তোলার ঘটনা ছাপা হওয়ায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন।

আজ বেলা ১১টা থেকে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রোমেডিকেল বিভাগের শিক্ষার্থীদের অষ্টম পর্বের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং (ইন্টার্নশিপ) ভাতা ও জামানতের টাকা দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে তাঁদের টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল সোমবার থেকে এ টাকা দেওয়া শুরু হলে ছাত্রদের প্রাপ্য টাকা থেকে ‘বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ২০২৪’-এর নামে এক হাজার টাকা করে কেটে নেওয়া হয়। এদিন ইনস্টিটিউটের সম্মেলনকক্ষ থেকে এই টাকা বিতরণ করা হচ্ছিল। কক্ষের কলাপসিবল গেটের সামনে টেবিল পেতে রসিদ দিয়ে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। গতকাল সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা আগে কিছু জানতেন না। ক্যাম্পাসে এসে দেখছেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা এভাবে টাকা আদায় করছেন। কারা দায়িত্ব দিয়েছেন, তাঁরা জানেন না।

এ নিয়ে গতকাল প্রথম আলোতে ‘বিদায় সংবর্ধনার নামে টাকা তুলতে টেবিল পেতেছে ছাত্রলীগ’ শিরোনামে এবং আরও কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর সকাল থেকে পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করে। কেউ বিদায়ী ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার জন্য টেবিল নিয়ে বসলে তাঁদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল। ফলে আজ আর কেউ টেবিল নিয়ে টাকা আদায় করতে বসেননি।

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রশাসন পুলিশ মোতায়েন করেছে ক্যাম্পাসে। এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার সকালে

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে সিভিল, দুপুরে পাওয়ার এবং বিকেলে কম্পিউটার বিভাগের তিন শতাধিক বিদায়ী শিক্ষার্থীকে টাকা দেওয়া হয়। তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে আদায় করা হয় এদিন। সেই হিসাবে তিন লক্ষাধিক টাকা আদায় করেছে ছাত্রলীগ। আজ আরও প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীকে কর্তৃপক্ষ টাকা দিয়েছে। সেই টাকায় আর কেউ ভাগ বসাতে পারেননি। আগামীকাল বুধবার মেকানিক্যাল, ইলেকট্রনিকস ও মেকাট্রোনিক্স বিভাগের ছাত্রদের টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে।

চাঁদাবাজির সংবাদ ছাপা হওয়ার কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার সকালে

এদিকে বিভিন্ন পত্রিকায় ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির সংবাদ ছাপা হওয়ার কারণে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রথম আলোর আলোকচিত্রী আজ সকালে ক্যাম্পাসে ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে কথা বলার জন্য ভেতরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাঁরা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন। এতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জীহান ও সাধারণ সম্পাদক রানা হোসেন বক্তব্য দেন।

প্রথম দিনে যাঁদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে, সেই টাকার কী হবে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মোহম্মদ আবদুর রশীদ মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওদের সঙ্গে (ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) আমার কথা হয়েছে। ওরা বলেছে, যাদের টাকা নেওয়া হয়েছে তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান তারা করে দেবে। আর নতুন করে কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া হলে পুলিশ আটক করে নিয়ে যাবে। সেই প্রস্তুতি আছে।’ কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা তাঁদের টাকা ফেরত চাচ্ছেন, তাঁরা অনুষ্ঠান চান না—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অধ্যক্ষ বলেন, তাহলে তিনি টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নেবেন। কালকে তাঁরা ক্যাম্পাসে এলে সবার সঙ্গে আলাপ করে কীভাবে টাকা ফেরত নেওয়া যায়, সেই চেষ্টা করবেন।