অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে মাদারীপুরে দুই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম। আজ রোববার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ফ্ল্যাটে একসঙ্গে পাঁচ থেকে ছয়জন মদ পান করেন। মদ পানের সেই ভিডিও আমাদের কাছে আছে। ফ্ল্যাটে মদের বোতল পাওয়া গেছে। তাই আমরা প্রাথমিকভাবে তাঁদের মৃত্যু মদ্যপানে হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। লাশ দুটির সুরতহালে দুই তরুণীর শরীরে কোনো প্রকার আঘাত বা অন্য কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।’
গতকাল শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ওই ফ্ল্যাটে প্রথমে সাগরিকা আহমেদের (২৫) লাশ পাওয়া যায়। দুই ঘণ্টা ব্যবধানে তাঁর বান্ধবী পারুল আক্তারকে (২৭) হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনিও মারা যান। পরে তাঁদের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
ওই দুই তরুণী ছাড়াও সাগরিকা আহমেদের মা সাবিনা ইয়াসমিন (৪০), সাগরিকার মামা বাবু (৩৬) ও ডালিয়া বেগম (৪৫) নামের এক নারী মদপানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের তিনজনকেই মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মারা যাওয়া সাগরিকা শহরের উকিলপাড়া এলাকার কে এইচ শাকিল আহমেদের মেয়ে ও পারুল ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের বাঘোয়র এলাকার ইয়াদ আলী মাতুব্বরের স্ত্রী। তাঁরা একে অপরের বান্ধবী ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সাগরিকার মা সাবিনা ইয়াসমিনের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘সাগরিকার এক বান্ধবী ঢাকা থেকে একটি বোতলে করে মদ নিয়ে আসে। এর সঙ্গে দেশি বাংলা মদ মিশিয়ে তাঁরা পান করেন। মদ নিয়ে আসা সেই বান্ধবীর নাম-পরিচয় আমরা এখনো জানতে পারিনি। তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা করছি। তবে সাগরিকার মা, মামা ও আরও একজন নারীকে আমরা আটক করেছি। তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১ অক্টোবর মাদারীপুর শহরের কলেজ রোড এলাকার একটি বাসার চতুর্থ তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন সাগরিকা আহম্মেদ। সাগরিকার সঙ্গে তাঁর মা সাবিনা ইয়াসমিন ও মামা বাবু থাকতেন। শনিবার রাতে সাগরিকার বান্ধবী পারুল, সাথী ও ডালিয়া নামে তিন নারী তাঁদের বাসায় আসেন। পরে বাসার ভেতরে মদ পান করতে থাকেন। রাত আড়াইটার দিকে ঘরের ভেতরেই অসুস্থ হয়ে মারা যান সাগরিকা। গুরুতর অসুস্থ হন আরও চারজন। বিষয়টি টের পেয়ে ওই বাসার কেয়ারটেকার হেলাল সরদার দুই প্রতিবেশীর সহযোগিতায় সাগরিকা ও তাঁর মা, মামা ও বান্ধবী পারুলকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রোববার ভোর সাড়ে চারটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পারুল। ঘটনার পর সকালে ওই বাসায় সদর মডেল থানা, সিআইডি, গোয়েন্দা ও বিশেষ শাখা পুলিশের একাধিক দল পরিদর্শনে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে।
মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রিয়াদ মাহামুদ বলেন, ‘অতিরিক্ত নেশা করায় রোগীদের অবস্থা তেমন একটা ভালো না। আমরা আমাদের সাধ্যমতো আহত তিনজনকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তাঁদের আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরে পরবর্তী চিকিৎসা দেওয়া হবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলছেন
ওই বাসার কেয়ারটেকার হেলাল সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে চিৎকার–চেঁচামেচি শুনে এগিয়ে যাই। পরে দেখি একজন মরে ফ্লোরে পড়ে আছেন, কয়েকজনের অবস্থায় ভালো না, মাতলামি করছে। পরে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর আরও একজন মারা যান। পরে পুলিশকে খবর দিই। এই বাড়িতে কীভাবে কী হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না।’
সাগরিকাদের প্রতিবেশী সুমি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হেলালের চিৎকার শুনে সাগরিকাদের ঘরে যাই। সেখানে দেখি সবাই চিত–কাত হয়ে পড়ে আছেন। কেউ বিছানায়, কেউ ফ্লোরে। ঘরটাও ছিল অগোছালো।’
নিহত সাগরিকার মা সাবিনা ইয়াসমিন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর কাছে রাতের ঘটনা জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ের বান্ধবী পারুল মদ আনে। ওই মদ সবাই কমবেশি খাই। অন্যরা নাচ–গান করেছে। আমি বসে ছিলাম। হঠাৎ সাগরিকা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর কী থেকে কী হয়ে গেল কিছুই বুঝলাম না।’
মাদারীপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. এনায়েত হোসেন বলেন, যাঁরা এই বাসায় ভাড়া থাকতেন, তাঁদের জন্মস্থান এখান থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে। সেখান থেকে এখানে এসে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকাটা রহস্যজনক। এ ঘটনার পেছনে অন্য কিছু থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা।