ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্মীয় উপাসনালয় ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি ও লুটপাট থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই রাতভর পাহারা দিচ্ছেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্মীয় উপাসনালয় ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি ও লুটপাট থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই রাতভর পাহারা দিচ্ছেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দুদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ে রাত জেগে পাহারা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এলাকাসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন আলেম সমাজ, বিএনপি নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। ধর্মীয় উপাসনালয় ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি ও লুটপাট থেকে রক্ষা পেতে গত সোমবার রাত থেকে তাঁরা লাঠি, বাঁশি ও টর্চলাইট নিয়ে রাতভর পাহারা দিচ্ছেন।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশত্যাগের খবরে সোমবার দুপুরের পর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা আগুনে পোড়ানোর পর চলে ব্যাপক লুটপাট। এ ছাড়া কসবা উপজেলার পানিয়ারূপ এলাকায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাড়ি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফা, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা আফরিনসহ বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

সোমবার রাত থেকে পরদিন মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সদর থানায় চলে লুটপাট। এসব ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলা থেকে রক্ষা পেতে বৈঠক করে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে রাত জেগে পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর পর থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে জেলার আলেম সমাজ, বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় লোকজন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা নিয়মিত রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মতবিনিময় করেন। বুধবার দুপুরে জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সমীর চক্রবর্তী ও জেলা তরুণ দলের আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে আসেন। তাঁরা বলেন, ‘আমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন মহল্লায় পাহারা দিচ্ছি। এ ছাড়া হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে পাহারা জোরদার করা হয়েছে।’

এর আগে মঙ্গলবার সকালে আখাউড়া পৌর এলাকার মহিউস সুন্নাহ মাদ্রাসায় বৈঠক করেন আলেম-ওলামা ও ইমাম পরিষদের নেতারা। বৈঠকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও বাড়িঘর রক্ষায় করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। মাওলানা আসাদ আল হাবীবের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন মুফতি মো. আসাদুজ্জামান, কাজী মো. মাঈনুদ্দিন, মাওলানা মো. হেলাল, মুফতি ইব্রাহিম, বিল্লাল আহমেদ, হাফেজ রাসেল, মো. বায়েজিদ প্রমুখ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পক্ষে সেখানে বক্তব্য দেন উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সদস্যসচিব বিশ্বজিৎ পাল।

বিশ্বজিৎ পাল বলেন, আখাউড়ার বিভিন্ন মসজিদে নামাজের বয়ানে মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর রক্ষায় সচেতনতার কথা বলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর পৌর এলাকার রাধামাধব আখড়ায় হেফাজতের নেতৃত্বে পাহারা দেওয়া হয়। বিএনপির নেতা-কর্মী, আলেম সমাজ ও স্থানীয় লোকজন রাত জেগে হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে পাহারা দিচ্ছেন।