শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। গতকাল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে
শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। গতকাল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে

পটুয়াখালী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এক শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগের তদন্ত শেষের আগেই আরেকজন ‘লাঞ্ছিত’

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) সহ-উপাচার্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএ-টু) মো. সামসুল হক ওরফে রাসেলের বিরুদ্ধে আগেও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনার তদন্ত ৯ মাসেও শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত কমিটি। এর মধ্যেই আরেক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে সামসুল হকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

গত শনিবার সকালে বিদ্যালয়ের পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি অ্যান্ড মাকেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সামসুল হক অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় গতকাল রোববার শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিচারসহ তাঁকে অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও প্রাশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করেন। অবরোধের প্রায় ছয় ঘণ্টা পর গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

এরপর বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা বিকেলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এ ঘটনার তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। তাই এখন আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিচার ও অপসারণের দাবিতে তাঁরা অনড় রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামসুল হকের বিরুদ্ধে আগেও শিক্ষককে লাঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালের ২২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন মণ্ডলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার বিষয়ে আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সে সময় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ছিল। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে অপদস্থ করেন সামসুল হক, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি শিক্ষক সমিতিসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হলে তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ইমরানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে আমরা এখনো তদন্ত শেষ করতে পারিনি। অভিযুক্ত মো. সামসুল হককে একাধিকবার তদন্ত কমিটির কাছে উপস্থিত হতে বলা হলেও তিনি আসেননি। তাই রাসেলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর আমরা দেরি করব না। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

এবারের ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম শিক্ষক সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সামসুল হক গত শনিবার ডাইনিংয়ে (শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডাইনিং কক্ষ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং উপস্থিত অন্য শিক্ষকদের সামনেই আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও দেন।’

অভিযোগের ব্যাপারে সামসুল হক বলেন, তাঁর এক আত্মীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ওই শিক্ষকের সঙ্গে নজরুল ইসলামের বিভাগীয় বিষয়ে মতানৈক্য হয়। তাই তিনি কোনো ঝামেলা না করতে নজরুল ইসলামকে অনুরোধ করেন। পরে এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়। তবে মারামারি, লাঞ্ছিত করার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি তাঁর।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি জেহাদ পারভেজ বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে জড়িত কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। অভিযুক্ত কর্মকর্তা এর আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন, যা বর্তমানে তদন্তাধীন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ব্যাপারে উদাসীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সন্তোষ কুমার বসু প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক লাঞ্ছিতের অভিযোগে সামসুল হককে ওএসডি করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স (এনএফএস) অনুষদের ডিন দিলরুবা ইয়াসমিনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।