রাজশাহী মহানগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম তাঁর দপ্তরে বসে এক ব্যক্তির সঙ্গে খাম আদান-প্রদান করছেন—এমন একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
ওসির কাছ থেকে খাম নিয়ে আবার ওসিকে ফেরত দেওয়া ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি মাহবুব আলম বলেন, ‘আমার সম্পর্কে জানেন। আমি পাবলিকের কাছ থেকে টাকা খাই না। কার সাথে এ রকম কথা হয়েছে, সেটা মনে করতে পারছি না। তবে একজনের কাছ থেকে খামে ভরে ছিনতাইকারীদের তালিকা নিয়েছিলাম। ওই খাম ওইভাবেই আছে। সেই তালিকা নেওয়ার ভিডিও হতে পারে।’ খামে ভরে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অসত্য দাবি করে ওসি মাহবুব আলম বলেন, এটা নিয়ে তিনি ঝামেলায় আছেন।
ফাঁস হওয়া ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, ওসি মাহবুব আলম তাঁর চেয়ারে বসে আছেন। টেবিলের অপর দিকে চেয়ারে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলছেন, ‘মাহবুব ভাই, ভাই উঠব ভাই।’ জবাবে ওসি বলেন, ‘আচ্ছা।’ তখন ওই ব্যক্তি বলেন, ‘একটু কথা বলে যাই।’ ওসি তাঁর দিকে মনোযোগ দিয়ে বলেন, ‘হুম।’ সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, একটা ছোট ইয়ে, খাম দেন।’ ওসি তখন মুচকি হাসেন। এ সময় ওই ব্যক্তি বলেন, ‘মাহবুব ভাই, আপনি আমাকে চেনেন, জানেন, বোঝেন। আমি বিপদে পড়সি বলেই আপনার কাছে আসছি ভাই। আমি বিপদেই পড়ি।’ তখন তৃতীয় এক কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘দাও।’ ভিডিও ধারণের ক্যামেরা ওই তৃতীয় ব্যক্তির হাতেই ছিল।
এরপর ওসি মুচকি হাসতে হাসতে টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটি খাম বের করে দেন। এরপর ওসি তৃতীয় ওই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘দিলাম ভাই, বুইঝেন। তাঁকে অবশ্য আগেরটাও আমি হেল্প করসি।’ ওই ব্যক্তি তখন বলেন, ‘আমি জানি, আমি মাহবুব ভাইয়ের কাছে আসলে ভাই কাজ হবে।’ এ সময় ওসি বলেন, ‘না, যথেষ্ট হেল্প করসি।’ কথা বলতে বলতে সামনে থাকা ওই ব্যক্তি ভরা খাম টেবিলে এগিয়ে দিলে ওসি সেটি আবার নিয়ে ড্রয়ারে রেখে দেন।
ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন! আমি আরেক দিন এসে ডিটেইলস বলব, তখন বুঝবেন ও আমাকে কী পর্যায়ে পেরেশানিতে নিয়ে আসছে। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না যদি অফিশিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম আমি। সে জিএম স্যারের কাছে ৪০ জন লোক নিয়ে গেছে রিমুভ ফরম সার্ভিস করার জন্য আমার বোনের। আমি কী বোঝাব বলেন!’ তখন ওসি বলেন, ‘দুজনেই পানিশমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, আমার বোনের যদি পানিশমেন্ট হয় হোক, কিন্তু এই অপরাধ; অন্যায় যে করে, আর যে সহে—দুজনে সমান অপরাধী।’ ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের এই ভিডিও এখানেই শেষ হয়।
ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম কোনো বিষয় আমি জানি না। যদি এ রকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।’