সারা দেশে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রমের ফল প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল সোমবার। লটারিপদ্ধতিতে অনলাইনে এই ফল ঘোষণা করা হয়। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির প্রভাতি পালার তালিকায় এক শিক্ষার্থীর নাম ছয়বার দেখা গেছে। এ ছাড়া আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর নামও একাধিকবার পাওয়া গেছে। কোনো কোনো শিক্ষার্থীর নাম মূল তালিকায় থাকার পাশাপাশি অপেক্ষমাণ তালিকায়ও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করা হয়। ১৬ নভেম্বর অনলাইনে ভর্তি আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৬ ডিসেম্বর। ১০ ডিসেম্বর টেলিটকের ওয়েবসাইটে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচনের কথা থাকলে তা পরিবর্তন করে গতকাল নির্ধারণ করা হয়।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে প্রভাতি পালায় ১১৭ ও দিবা পালায় ১১৯ শিক্ষার্থী ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে প্রভাতি ও দিবা উভয় পালায় ১১৯ জন করে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়।
ভর্তি তালিকায় এক শিক্ষার্থীর একাধিকবার নাম দেখে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিভাবকেরা বলছেন, নাম, জন্মতারিখসহ ব্যক্তিগত তথ্য একটু এদিক-সেদিক করে অনেকে প্রয়োজনমতো একাধিক জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে লটারিপদ্ধতিতে তাঁর সন্তানকে কাঙ্ক্ষিত বিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছেন। এটা রীতিমতো প্রতারণা। এটা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আপত্তিকর। এক শিক্ষার্থীর একাধিক জন্মনিবন্ধন ব্যবহার করে ভর্তির আবেদন করার সুযোগ নেই। তারপরও এটা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির প্রভাতি পালায় ১১৯ শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয়। এই তালিকা ঘেঁটে এক শিক্ষার্থীর ছয়বার নাম খুঁজে পাওয়া গেছে। ছয়টিতেই তার তার নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম একই রয়েছে। তালিকার ৩, ৩০, ৬১, ১০১, ১০৭ নম্বরে তার নাম এসেছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তালিকার ১১৯ নম্বরেও তার নাম এসেছে। ছয়টিতে আলাদা আলাদা জন্মনিবন্ধন নম্বর দেখানো হলেও তাঁর ছবি ও যোগাযোগের মুঠোফোন নম্বর একই দেখানো হয়েছে।
প্রভাতি পালার সাধারণ কোটায় একবার ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আরেকবার ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি অপেক্ষমাণ তালিকায় আরেক শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই শিক্ষার্থী একই বিদ্যালয়ের দিবা পালায়ও তিনবার ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। একবার সাধারণ কোটায়, অন্যটি প্রতিবন্ধী কোটায়। আবার দিবা পালায় সে অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে। লটারিতে ভর্তির সুযোগ নিতে ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক ছয়টি আলাদা আলাদা জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করেছেন।
ভর্তি তালিকায় শিক্ষার্থীর নামের পাশে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও অভিভাবকদের মন্তব্য পাওয়া পায়নি।
তালিকার ৬ ও ৭৯ নম্বর রয়েছে আরেক শিক্ষার্থীর নাম। তালিকায় দুটি নামের পাশে যোগাযোগের মুঠোফোন নম্বর একই থাকলেও সেখানে দুটি আলাদা জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া তালিকার প্রভাতি পালায় ৭০ ও ৮৪ নম্বরে অপর শিক্ষার্থী আলাদা জন্মনিবন্ধন ব্যবহার করে দুবার ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
আবেদা সুলতানা নামের এক অভিভাবক বলেন, লটারিপদ্ধতিতে এ রকম নানা অসংগতি দেখা যাচ্ছে। এ পদ্ধতিতে মেধাবীরা ভর্তির সুযোগ হারাচ্ছে। বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করে সুষ্ঠুভাবে ফল প্রকাশের দাবি জানান।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহানা খান বলেন, ‘ভর্তিপ্রক্রিয়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। তবে এক শিক্ষার্থীর ছয়বার ভর্তির সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি নজরে পড়েছে।’
ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনে দেশের নাগরিকদের জন্মনিবন্ধন করা হয়। ঠাকুরগাঁও পৌরসভার জন্মনিবন্ধনের দায়িত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ আরমান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদ হচ্ছে একজন মানুষের জন্মের পর তার প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। সব নাগরিকের জন্য জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। তবে একই ব্যক্তি কোনোভাবেই একাধিকবার জন্মনিবন্ধন করতে পারবে না। যদি কোনো ব্যক্তির একের অধিক জন্মনিবন্ধন থাকে, তাহলে অতিরিক্তটা (ডুপ্লিকেট) বাতিল করে দিতে হবে। তা না হলে তিনি জেল–জরিমানার সম্মুখীন হতে পারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই ব্যক্তির অনুকূলে একাধিকবার জন্মনিবন্ধন করার সুযোগ নেই। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন, ২০০৪ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি জন্ম বা মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন বা এমন কোনো লিখিত বর্ণনা বা ঘোষণা প্রদান করেন, যা তিনি মিথ্যা বলে জানেন বা বিশ্বাস করেন, তা হলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে অথবা অনধিক এক বৎসর বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আবার এই আইনের অন্য একটি উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো নিবন্ধক উল্লিখিত মিথ্যা তথ্য, লিখিত বর্ণনা বা ঘোষণা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও জন্ম বা মৃত্যুনিবন্ধন করেন, তা হলে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে অথবা অনধিক এক বৎসর বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।