সংকট সঙ্গে করেই চালু হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় 

আজ ৩ মার্চ নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবনে এর শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবন

শিক্ষক, অবকাঠামোসহ নানা সংকট সঙ্গে নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। জেলা শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের নির্মাণাধীন দশতলা একাডেমিক ভবনের তিনটি তলায় অস্থায়ীভাবে এর যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ ৩ মার্চ, শুক্রবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এটির শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে ইংরেজি, গণিত, হিসাববিজ্ঞান ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এই চার বিভাগ চালু হচ্ছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রতিটি বিভাগে ৩০ জন করে মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী চার বছর মেয়াদি স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. ইমান আলীকে। আর রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কর্মরত আছেন শেখ মেহেদী হাসান।

তা ছাড়া চারটি বিভাগে দুজন করে মোট আটজন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। িশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন পর্যন্ত শিক্ষকসহ ২৩ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জেলা সদরের বৌলাই ইউনিয়নের জামতলা ও মইশাখালী বিলের ১০৩ একর জমি বন্দোবস্ত পেতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিশনে জমা আছে। এরই মধ্যে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের নির্মাণাধীন দশতলা একাডেমিক ভবনের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চমতলা দুই বছরের জন্য বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। 

গত সোমবার গুরুদয়াল সরকারি কলেজে সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন নতুন ভবনের সামনে রাষ্ট্রপতির নামে ফলক তৈরি হচ্ছে। ভবনে যাওয়ার রাস্তা ও সিঁড়িতে মোজাইকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মিস্ত্রিরা। দশতলা একাডেমিক ভবনের ছয়তলা পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি তলায় ১২টি কক্ষে দুই বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলবে। এর ৩ নম্বর তলায় শিক্ষকসহ স্টাফদের জন্য কার্যালয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর বাকি দুটি তলার আটটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হবে। তা ছাড়া ৮–৯ মাস আগে শহরের হয়বতনগর এলাকায় একটি ভবন ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয়সহ রেস্ট হাউসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আরও সময় লাগবে। কারণ, সেখানে এখনো অনেক নিচু জমি ও বিল রয়েছে। সেখানে মাটি ভরাট ও ভবন নির্মাণ বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। 

এ নিয়ে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির অভিমত, কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের আগে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে একটি ক্যাম্পাস গড়ে তোলা উচিত। এরপর শিক্ষার্থী ভর্তিসহ অন্য সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা দরকার। অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অনুমোদনপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অনুমোদন পাওয়ার পর কোনো ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দেওয়া হচ্ছে। অগোছালোভাবে শুরু করাতে দেখা যাবে, নিজেদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ব্যাচের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হয়ে যাবে। যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করার আগে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়টিকে উচ্চশিক্ষার গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখছেন তাঁরা। এতে শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা খুবই অপ্রতুল থাকে। থাকবে জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের সংকট। এমনকি শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার ন্যূনতম সুবিধা ও পরিবেশ পান না। তাই প্রয়োজনীয় ন্যূনতম অবকাঠামো তৈরির আগে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা ঠিক নয়। তা ছাড়া গ্রন্থাগার, ল্যাবরেটরির মতো মৌলিক সুবিধাসহ উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত বলে মনে করেন তাঁরা। 

এ ব্যাপারে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম মুশতাকুর রহমান বলেন, ওই তিনটি তলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কোনো ভাড়া দিতে হবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন ভবনের কাজ ত্বরান্বিত করতে ইতিমধ্যে অনেক টাকা ব্যয় করেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে ছয়তলা এই ভবন দশতলা পর্যন্ত অনুমোদন পেতে সহজ হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।

শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদানে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ প্রথম আলোকে বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ওই দিন শিক্ষার্থীদের বই দেওয়াসহ নানা বিষয় বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ। 

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জেলা সদরের বৌলাই এলাকায় ১০৩ একর জায়গার কাগজপত্র পরিকল্পনা কমিশনে জমা আছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই প্রস্তাবিত জায়গায় মাটি ভরাটসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।