‘রাষ্ট্রের কাছে, প্রশাসনের কাছে বলতে চাই, আপনাদের কাছে সব তথ্যপ্রমাণ আছে, কারা, কেন ত্বকীকে হত্যা করেছে, আপনারা ত্বকী হত্যার বিচার করুন’, বলেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১১ বছর পূর্তি উপলক্ষে শিশু সমাবেশ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ নগরের দেওভোগে জিমখানা শেখ রাসেল নগর পার্কের মুক্তমঞ্চে ওই সমাবেশ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়।
নিহত ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, শিল্পী জাহিদা মোস্তফা, অশোক কর্মকার, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ন্যাপ জেলার সম্পাদক আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম প্রমুখ।
মেয়র আইভী বলেন, ‘শিশু-কিশোর হত্যা, নারী হত্যাসহ যেকোনো হত্যাকাণ্ডের বিচার রাষ্ট্রের দায়িত্ব থেকেই হওয়া প্রয়োজন। সারা পৃথিবীতে রাষ্ট্র দায়িত্ব নিয়ে হত্যার বিচার করে। ১১ বছরেও আমাদের সন্তান ত্বকী হত্যার বিচার পাচ্ছি না।’
খুনীদের পৃষ্ঠপোষকতা না দেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ মনে হয় ৬৪ জেলা থেকে একটু বাইরে আছে। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ঘাতকেরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
মেয়র আইভী বলেন, ‘এখানে ত্বকী ছাড়া আরও অনেক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ত্বকী মঞ্চের প্রতিবাদের কারণে হত্যাকারীদের একটু হলেও বুক কাঁপছে, তবে হত্যাকাণ্ড থেমে নেই। আগে ধরে নিয়ে হত্যা করা হতো, এখন অন্য উপায়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। অনেকে সাহস করে প্রতিবাদ করছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহু বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছেন। অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছেন। বিচার সম্পন্ন হওয়ায় আপনার প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার চাহিদা বেড়েছে। মানুষের ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছে। আপনি ত্বকী হত্যার বিচার করুন।’
ত্বকীর মৃত্যু নেই উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘ঘাতকেরা ত্বকীর লাশ জলে ভাসিয়ে গুম করতে চেয়েছিল। কিন্তু নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতিরোধের মধ্যে এর কিছুই হয়নি। মৃত্যুহীন ত্বকী তাকিয়ে আছে, এই মৃত্যুহীন ত্বকীর অবয়ব চেহারা, অব্যক্ত ভাষা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে যাচ্ছে। আজ শিশুদের কণ্ঠে ও তাদের মায়েদের কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে, ঘাতক তুমি যতই শক্তিশালী হও না কেন, তোমার ক্ষমা নেই, তোমার রেহাই নেই। তোমার বিচার এই বাংলার মাটিতে কোনো একদিন হবেই।’
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস বিকৃতি করার চেষ্টা করছে ওসমান পরিবার। তারাই ডিগবাজি দেওয়ার রাজনীতি করেছে। তারা এখন আওয়ামী লীগের দরদি হতে নারায়ণগঞ্জে নতুন ইতিহাস রচনা করতে চায়। আপনারা নারায়ণগঞ্জে কত লাশ ফেলেছেন, তা বলেন না কেন। কত মায়ের বুক খালি করেছেন, সেটা বলেন না কেন? বছর বছর শতকোটি টাকা চাঁদা তোলেন, এগুলো বলেন না কেন। তরুণ প্রজন্মকে ইতিহাসগুলো জানানো দরকার। এই দুর্বৃত্তরা কীভাবে নারায়ণগঞ্জের সবকিছু গ্রাস করার পরও ইতিহাস পর্যন্ত তারা নিজেদের পক্ষে নিতে চায়।’
শিশু ও তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ একটি সমাজ ও দেশ উপহার দেওয়ার লড়াই করতে হবে। লড়াইকে পাশ কাটিয়ে আমরা কেউ টিকতে পারব না, আমরা বাঁচতে পারব না। দেশটাকে বাঁচাতে পারব না।’
এর আগে বেলা তিনটা থেকে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ওই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।