রাজবাড়ীতে পশুর হাট নিয়ে মারামারি, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৭ জনকে কুপিয়ে জখম

মারামারি
প্রতীকী ছবি

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় কোরবানির পশুর হাট নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুই পক্ষের মারামারি হয়েছে। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে দাদশী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান দেলোয়ার শেখসহ সাতজন কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার দাদশী সিংগাবাজারে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার শেখ (৪৫), তাঁর ছোট ভাই হাসান শেখ (৩০), ছেলে রুহান শেখ (১৭) ও চাচাতো বোন রোজিনা খাতুন (৩২)। আহত অন্য পক্ষের তিনজন হলেন প্রবাসী আকবর খানের বড় ভাই লুৎফর রহমান খান (৫৪), বড় ছেলে শাহরুখ খান (২৭) ও ছোট ছেলে শাওন খান (১৭)।

সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাহিদুল ইসলাম বলেন, পশুর হাট নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ারের সঙ্গে প্রবাসী আকবর খান–সমর্থিত লোকদের বিরোধ বাধে। গতকাল রাত ১১টার দিকে সংঘাতের আশঙ্কার খবর পেয়ে তিনি সিংগাবাজারে উপস্থিত হন। এ সময় অনেক লোকজনের উপস্থিতিতে সমঝোতার চেষ্টাকালে দুই পক্ষের মারামারি হয়। এতে ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন গুরুতর জখম হন।

পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের সিংগা-নিজাতপুর বাজারে অস্থায়ীভাবে কোরবানির পশুর হাট বসে। হাটের সুবিধাবঞ্চিত স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিদের সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার শেখের মনোমালিন্য হয়। স্থানীয় সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিরা এ বিষয়ে সৌদিপ্রবাসী আকবর খানের কাছে অভিযোগ করেন। গত সোমবার এ নিয়ে দুই পক্ষের কথা-কাটাকাটি হয়। পরে গতকাল রাত ১১টার দিকে আকবর খানসহ তাঁদের লোকজন ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার শেখের কাছে হাটের বিষয়ে জানতে চান। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আবার কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের কোপে উভয় পক্ষের সাতজন জখমের শিকার হন।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার শেখসহ সাতজনকে হাসপাতালে আনা হয়। সবার শরীরে জখমের চিহ্ন ছিল। ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার শেখ মুঠোফোনে বলেন, তিনিসহ পরিবারের চারজন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আকবর খানের ভাই বেলায়েত খান আগামী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যানের প্রার্থী। তাঁরা দলবদ্ধ হয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর কোমরের দুই পাশ ও ডান রানে কোপ দেন। তাঁর ছেলে, ছোট ভাই ও বোনকেও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।

আকবর খান বলেন, পশুর হাটের কিছু সুবিধা বহিরাগত ব্যক্তিদের দেওয়া নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন। এ নিয়ে গতকাল রাতে চেয়ারম্যানের ছোট ভাই হাসান ফোন করে গালমন্দ করেন। পরে রাত ১১টার দিকে সিংগাবাজারে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় হাসান ধারালো চাকু দিয়ে তাঁকে কোপাতে এলে ভাইস চেয়ারম্যান ঝাপটে ধরেন। তা না হলে প্রাণে মারা যেতেন। এ সময় মারামারিতে তাঁর বড় ভাই লুৎফর রহমান খানসহ তিনজন গুরুতর আহত হন। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যানকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার ঘটনায় তাঁরা জড়িত নন।

আকবর খান অভিযোগ করেন, আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে গ্রামের বাড়ি থেকে তাঁর প্রাইভেট কারে ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রাজবাড়ী শহরে যাওয়ার পথে চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সদর থানায় নেওয়া হয়েছে।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখারুল আলম প্রধান বলেন, মারামারির খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ বিষয়ে আহত ইউপি চেয়ারম্যানের পরিবার থানায় অভিযোগ দিতে এসেছে। অভিযোগ পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।