রক্ত দিয়ে ব্যানার লিখে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে
রক্ত দিয়ে ব্যানার লিখে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রক্ত দিয়ে ব্যানার লিখে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানালেন শিক্ষার্থীরা

রক্ত দিয়ে ব্যানার লিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানান তাঁরা।

তিনজন শিক্ষার্থী সিরিঞ্জের মাধ্যমে শরীর থেকে রক্ত দেন। পরে সেই রক্ত দিয়ে সাদা কাপড়ে ‘পোষ্য কোটা নিপাত যাক’ লিখে ব্যানার তৈরি করা হয়। সেই ব্যানারে রক্তমাখা হাতের ছাপও দেন শিক্ষার্থীরা। পরে ওই ব্যানার দিয়ে মানববন্ধন পালন করেন তাঁরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘রক্ত গেছে আরও যাক, পোষ্য কোটা নিপাত যাক’, ‘মেধাবীরা মুক্তি পাক, পোষ্য কোটা নিপাত যাক’ প্রভৃতি লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা একটি মীমাংসিত বিষয়। তবু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটার মতো একটি অনৈতিক বিষয়কে বহাল রেখেছে। জুলাই বিপ্লবে তাঁদের ভাইয়ের তাজা রক্তের ঘ্রাণ হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাকে পৌঁছায়নি। তাই তাঁরা আবারও শরীরের রক্ত বের করে ব্যানার বানিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে টাঙিয়ে দেবেন। যাতে সেখানে ঢুকতে গেলে কর্তাব্যক্তিদের নাকে তাঁদের ভাইয়ের রক্তের ঘ্রাণ পৌঁছায়।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘ন্যায্য দাবির জন্য শিক্ষার্থীরা কী করতে পারেন, তা আমরা জুলাই বিপ্লবে দেখেছি। জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই আমরা আজ এখানে দাঁড়িয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ন্যায্যতার পক্ষে থাকতে হবে। পোষ্য কোটা বাতিলের বাইরে কোনো অপশন নেই। এটি তাঁরা কীভাবে করবেন, সেটি তাঁদের ব্যাপার। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য যে থাকছে না, সেটি আমরা আজ রক্ত দিয়ে লিখে জানিয়ে গেলাম।’

রক্ত দিয়ে ব্যানার লেখা শিক্ষার্থী আল শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, চব্বিশের অভ্যুত্থানের শহীদ-আহত ভাইদের রক্তের ঘ্রাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নাকে পৌঁছাচ্ছে না। তাই আজ আমরা রক্তসংহতি জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়ে দিতে চাই, আজকের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পোষ্য কোটা আমরা মেনে নেব না। পোষ্য কোটার মতো একটি নিকৃষ্ট কোটা আমরা অবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ফলে সব বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। নতুন করে পোষ্য কোটা বাতিলের জন্য আমাদের এখানে দাঁড়ানোর কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করছে যে তারাও পোষ্য কোটা চায় না। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন আপনারা যদি না চান, তাহলে কেন পোষ্য কোটা বাতিল করছেন না? একদিকে তারা আমাদের স্থবির রাখার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থবির রাখার জন্য যে গেমপ্ল্যান সাজানোর দরকার, সেটা তারা করছে।’

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিল করতে শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিক আন্দোলন করছেন। স্মারকলিপি, আমরণ অনশন, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, লাল কার্ড প্রদর্শন, প্রতীকী ‘কবর’, গণস্বাক্ষর, জুতা নিক্ষেপের মতো কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে ২০ সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে। তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা থাকলেও এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি ওই কমিটি। এর মধ্যে ওই কমিটি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।