কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ সোমবার বিকেলে কুমিল্লা আদালতের বিচারক কামাল হোসেন এ আদেশ দেন।
একই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ঘটনার দিন আসামিদের বহনকারীর মাইক্রোবাসের চালক তিতাস উপজেলার লালপুর গ্রামের সুমন হোসেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া পাঁচ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল রাত আটটার পর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজার বাইতুন নুর জামে মসজিদ এলাকার সুমাইয়া কনফেকশনারির সামনে বোরকা পরা তিন দুর্বৃত্ত গুলি করে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় ২ মে রাত সাড়ে ১১টায় জামাল হোসেনের স্ত্রী পপি আক্তার বাদী হয়ে দাউদকান্দি থানায় নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
৬ মে এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের মো. ইসমাইলকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে, মনাইরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদারকে ঢাকার রায়ের বাগ থেকে এবং দাউদকান্দি উপজেলার গোপচর গ্রামের শাহআলমকে ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আজ বেলা সোয়া ১১টায় কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৬ মে রাতে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর এলাকা থেকে মাইক্রোবাসের চালক তিতাস উপজেলার লালপুর গ্রামের সুমন হোসেনকে এবং মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকা থেকে জিয়ারকান্দি গ্রামের শাহপরান ও মো. রবিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আজ বিকেলে ছয় আসামিকে কুমিল্লার আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারকের কাছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া পাঁচ আসামির সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক কামাল হোসেন প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপর আসামি মাইক্রোবাসচালক সুমন হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রিমান্ড শুনানি শেষে আসামিদের আদালত থেকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মামলার এজাহারভুক্ত ৯ আসামির মধ্যে ৩ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৮ আসামির মধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে পাঁচজন বিদেশে পালিয়ে গেছেন। জিয়ারকান্দি গ্রামের সুজন (৩২) ও আরিফ (২৮) নেপালে, জিয়ারকান্দি গ্রামের বাদল (৪৫) দুবাইয়ে, শাকিল (৩৫) ভারতে, জিয়ারকান্দি গ্রামের অলি হাসান (৩৯) সৌদি আরবে এবং কালা মনির (৪২) দেশে আত্মগোপনে আছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জামাল হোসেন গৌরীপুর বাজারে ব্যবসা করতেন। কয়েক বছর আগে গৌরীপুর মোড়ে খুন হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেনের অনুসারী ছিলেন তিনি। তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের বিবদমান পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিনি খুন হয়েছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।