পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করার সময় দড়ি ছিঁড়ে পড়ে দুই শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত শ্রমিক তুহিন হোসেনের চাচা মফিজুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে মামলাটি করেছেন। মামলায় নির্মাণকাজে তদারকি ও অবহেলার অভিযোগ তুলে ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার পরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রকল্পের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. হোসাইনকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে। মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এন এন কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার নাছিরুল হক (৩৫), পরিচালক হারুনর রশিদ (৬৬), প্রকল্প পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জি এম আজিজুর রহমান, অপর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মিজানুর রহমান (৩৮) ও প্রকল্পের সাইট ইঞ্জিনিয়ার সুজাউদ্দৌলা (২৩)।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে তিন নির্মাণশ্রমিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মাণাধীন ১২ তলা একটি ভবনে ১০ তলায় দড়ি ঝুলিয়ে প্লাস্টারের কাজ করছিলেন। হঠাৎ দড়ি ছিঁড়ে গেলে তাঁরা নিচে পড়ে যান। আহত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তিনজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। অন্যজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত দুজন হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাসুদেবপুর গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে তুহিন হোসেন (২৫) ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ঘণ্টি গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে আসাদুল আলী (৩০)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, যে ভবন থেকে পড়ে দুই শ্রমিক মারা গেছেন, সেটির নির্মাণকাজ করছে এন এন হুদা কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর আগে ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ করতে গিয়ে এক শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে কাজ করতে গিয়ে অপর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আরেক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।
কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহুতল ভবন নির্মাণে যেসব সেফটি কোড বা নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তার কিছুই এখানে মানা হচ্ছে না। এ কারণে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক শ্রমিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপাসিন্ধু বালা বলেন, ঘটনার পর গতকাল রাতেই নিহত শ্রমিক তুহিন হোসেনের চাচা মফিজুর রহমান থানায় হাজির হয়ে মামলাটি করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।