বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়া শিক্ষার্থী মুবতাছিন রহমান মাহিনের লাশ দেখতে এলাকাবাসী ও স্বজনদের ভিড়। আজ রোববার রংপুর নগরের জুম্মাপাড়া এলাকায়
বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়া শিক্ষার্থী মুবতাছিন রহমান মাহিনের লাশ দেখতে এলাকাবাসী ও স্বজনদের ভিড়। আজ রোববার রংপুর নগরের জুম্মাপাড়া এলাকায়

বনভোজনের বাস বিদ্যুতায়িত

‘সন্তান লাশ হয়ে ফিরল, এই দায়ভার কে নেবে?’

বাসার নিচে সামনের ফাঁকা জায়গায় রাখা একটি লাশবাহী গাড়ি। বাসার ব্যালকনি থেকে সেই গাড়ি দেখছে ১০ বছরের মোস্তায়িন। লাশবাহী ওই গাড়িতে আছে মোস্তায়িনের বড় ভাই মুবতাছিন রহমানের (মাহিন) মরদেহ। গতকাল শনিবার গাজীপুরের শ্রীপুরে বনভোজনের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে মুবতাছিনের মৃত্যু হয়।

মুবতাছিনের বাড়ি রংপুর নগরের জুম্মাপাড়ায়। শেষবারের মতো তাঁকে দেখতে, পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে আসছেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও পাড়া–প্রতিবেশীরা। তাঁর এমন মৃত্যু কেউ মানতে পারছেন না।

মুবতাছিন রহমান (মাহিন) গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ছাত্র ছিলেন। গতকাল শনিবার সকালে শ্রীপুরে বনভোজনের দ্বিতল বাসে প্রথম বিদ্যুতায়িত হন তিনি। বন্ধুকে ছটফট করতে দেখে ছুটে যান জোবায়ের আলম (সাকিব)। পরে দুজনই মারা যান। দুর্ঘটনায় তাঁদের আরেক বন্ধু মীর মোজাম্মেল নাঈমের (২৩) মৃত্যু হয়। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

মুবতাছিনের বাবা ইমতিয়াজুর রহমান এবি ব্যাংকের নীলফামারীর সৈয়দপুর শাখার ব্যবস্থাপক। মা নাজমুন্নাহার গৃহিণী। মুবতাছিনরা দুই ভাই। ছোট ভাই মোস্তায়িন রংপুরের পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে মুবতাছিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা শোকার্ত। মুবতাছিনের কয়েকজন বন্ধুর বাবা এসেছেন ইমতিয়াজুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁদের একজন রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মাহিনকে দেখি। আমার ছেলের বাল্যবন্ধু সে। ওর বাবা আমার বন্ধু। পরশু রাতে আমরা একসঙ্গে কত গল্প করলাম! অথচ এমন একটা ঘটনা ঘটল। এটা দুর্ঘটনা নয়, অবহেলাজনিত মৃত্যু।’

গতকাল রাত দুইটার দিকে মুবতাছিনের লাশ বাড়িতে পৌঁছায়। আজ বাদ জোহর জুম্মাপড়া বড় মাদ্রাসা মাঠে জানাজা হবে। পরে জুম্মাপাড়া কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

মুবতাছিনের চাচা হাসানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম মেধাবী একজন ছাত্রের মৃত্যুতে দেশের ক্ষতি হয়ে গেল। যে কারও অবহেলায় এটা ঘটেছে। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। সন্তান লাশ হয়ে ফিরল, এই দায়ভার কে নেবে?’

হাসানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তুলে বলেন, ‘রাস্তায় পল্লী বিদ্যুতের তার ঝুলে আছে। সেখানে পল্লী বিদ্যুৎ কী করল? প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে প্রশস্ত রাস্তা নেই, সেখানে ডাবল ডেকার বাসে কেন যাওয়া হলো? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কীভাবে এটার অনুমোদন দিল? ৪০০ শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা কেন তাঁরা দেখল না? আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’