ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা ঘেরাও করে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট করে বিক্ষুব্ধ জনতা। আজ সকালে তোলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা ঘেরাও করে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট করে বিক্ষুব্ধ জনতা। আজ সকালে তোলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা ছেড়েছে পুলিশ, আজ সকালেও চলছিল লুটপাট

সরকারপ্রধানের পদত্যাগের খবরে আগুন-লুটপাটের ঘটনার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা-পুলিশের সদস্যরা সেখান থেকে পুলিশ লাইনসে চলে গেছেন। গতকাল সোমবার রাত পৌনে নয়টার দিকে একযোগে থানা এলাকা ছেড়ে যান তাঁরা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সেখানে লুটপাট অব্যাহত আছে।

এর আগে গতকাল থানা এলাকা থেকে আসবাব ও প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামসহ মোটরসাইকেল লুটের ঘটনা ঘটে।

আজ সকালে দেখা গেছে, থানা এলাকায় কয়েকজন বস্তা ও ব্যাগে মালামাল ওঠাচ্ছিলেন। পরে এসব মালামাল ইজিবাইক ও অটোরিকশায় উঠিয়ে নিজেদের গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী, বিক্ষোভকারী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা সদর থানা ঘেরাও করে হামলা চালায়। তারা সদর থানার বাইরে রাখা দুটি পিকআপ ও একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় প্রধান ফটক ভাঙার চেষ্টা ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন মাইকে ঘোষণা দিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান করেন। কিন্তু দুপুর থেকে তারা থানার সামনে ও ঘোড়াপট্টি সেতুর ওপর অবস্থান নেয়।
 

থানার ভেতরে প্রায় ২০টি যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আবার থানা ঘেরাও করে পুলিশ সদস্যদের থাকার পাকা ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একপর্যায়ে থানার প্রধান ফটকের ভেতরে থাকা একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন ধরিয়ে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। তারা থানার ওসির থাকার কক্ষে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার পাশাপাশি লুটপাট চালায়। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পৌনে ছয়টার দিকে সেনাবাহিনী তিনটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে সন্ধ্যা সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা থানার প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ওই সময় ওসি, পুলিশ পরিদর্শক, এসআই, ডিউটি অফিসারসহ পুলিশ সদস্যদের প্রায় ২০টি যানবাহন ও থাকার কক্ষের পাশাপাশি পাশের ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে পুরো থানার নিচতলা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার সব কক্ষ পুড়ে গেছে।

রাত পৌনে নয়টার দিকে দেখা যায়, থানার ওসি আসলাম হোসেনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন সদস্য থানা ত্যাগ করছেন। এ সময় থানার সব কক্ষের আসবাব, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, টিভি, এসি, মোটর, জেনারেটর, চেয়ার, টেবিল, পাখা ও বিভিন্ন অভিযানে জব্দ করা একাধিক মোটরসাইকেল লুটপাট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর আগে গতকাল বিকেলেই থানার আবাসিক কোয়ার্টার থেকে পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।‌

ওই সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা পুরো থানা ভবন ও সব কক্ষ পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে রেখেছি। পুলিশের ৪০-৫০ জন সদস্যকে নিয়ে নিরাপদে থানা ত্যাগ করেছি। পুরো থানা এলাকায় তারা লুটপাট করেছে। এতে অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।’