ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র আঘাতে নোয়াখালীর হাতিয়া ও সুবর্ণচরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বিনষ্ট হয়েছে খেতের আমন ফসল ও শাকসবজি। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে পড়ার কারণে পুরো জেলায় আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন জেলাবাসী।
ঘূর্ণিঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আহত হয়েছেন মো. হানিফ নামের এক ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি। হাতিয়া উপজেলার চতলার ঘাটে ২৫০ বস্তা ধানসহ একটি ট্রলার ডুবে গেছে। এ ছাড়া ডুবে গেছে ঘাটে থাকা একটি ড্রেজার মেশিন।
প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র আঘাত শুরুর আগের রাত থেকেই জেলাজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়। জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, আজ দুপুরে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি নোয়াখালীতে আঘাত হানে। জেলা শহর মাইজদীতে ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার। এতে শহরের পাঁচ রাস্তার মোড় এলাকায় একটি গাছ উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের ১১ হাজার কেভিএ লাইন ছিঁড়ে যায়। ঝড়ের আঘাতে জেলার উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়ার হরণী ও চানন্দিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে কোথায়ও কোনো প্রাণহানির তথ্য এখন পর্যন্ত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
হাতিয়ার হরণী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে তাঁর ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০টি কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। একই সময় ঝড়ের আঘাতে স্থানীয় চতলার ঘাটে ২৫০ বস্তা ধানসহ একটি ট্রলার নদীতে ডুবে গেছে। এ সময় সেখানে থাকা একটি ড্রেজারও ডুবে যায়। তবে এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
একই ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নাজমা আক্তার জানান, তাঁর আওতাধীন তিনটি ওয়ার্ডে ১৮টি কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। এ ছাড়া গাছপালা, খেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে গাছের ডাল পড়ে মো. হানিফ (৬১) নামের এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তিনি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আল-আমিন গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়ভাবে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী প্রথম আলোকে বলেন, ঝড়ের আঘাতে তাঁর উপজেলায় কাঁচা ঘরবাড়ির ও গাছপালার ক্ষতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো এসে পৌঁছায়নি। ঝড়ের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ারের পানি বইতে দেখা গেছে।
সুবর্ণচর উপজেলার ইউএনও মোহাম্মদ আল আমিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে চর জব্বর ইউনিয়নের আবদুল মালেক উকিল বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরবাটা ইউনিয়নের সওদাগর হাট উচ্চবিদ্যালয়ের টিনশেড ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। একই সময় ঝোড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন সড়কে বেশ কিছু গাছ উপড়ে পড়েছে। খেতের পাকা ধান বেশির ভাগ শুয়ে পড়েছে। উঠতি শাকসবজি ক্ষতির মুখে পড়েছে। আজ সকাল থেকে সুবর্ণচর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুল বাহার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালপালা পড়ে বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে গেছে। এতে পুরো শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
একই তথ্য জানিয়েছেন নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাকির হোসেনও। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে লাইনের তার ছেঁড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা কাজ করছেন। রাতের মধ্যে যতটুকু পারা যায়, লাইন চালু করা হবে।