খুলনায় দেশের একমাত্র গণহত্যা জাদুঘরের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘গণহত্যা জাদুঘরের এক দশক’ শিরোনামে দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার নতুন ভবনে নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করেছে গণহত্যা জাদুঘর। মোট তিনটি পর্বে দিনব্যাপী এ আয়োজন হয়।
সকালে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সেমিনার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনে সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
দ্বিতীয় পর্বের একাডেমিক সেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক পুনম মুখার্জি এবং পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সাগর তরঙ্গ মণ্ডল। তাঁদের প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল সাজ্জাদ আলী জহির (বীরপ্রতীক) এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান শরিফ উদ্দিন আহমদ। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি এবং বাংলাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও আর্কাইভিস্ট মাহবুবর রহমান।
বিকেলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দশম শহীদ স্মৃতিস্মারক বক্তৃতা দেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি কবি তারিক সুজাত। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি সম্পাদক চৌধুরী শহীদ কাদের।
কবি তারিক সুজাত ‘যে জাদুঘর জীবনের কথা বলে’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরকে প্রচলিত সংজ্ঞায় শুধু হিসেবে ভাবলে ভুল হবে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই জাদুঘরকে স্রোতের বিপরীতে সাঁতরাতে হয়েছে’।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে আমাদের শেকড়কে। আমাদের শেকড় হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।’
সভাপতির বক্তব্যে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সমাজে ঘাতকদের কখনো রাজনীতি করার অধিকার থাকতে নেই। যারা পাকিস্তানের রাজনীতি করতে চায়, তাদের রাজনীতি করার বিরুদ্ধে আমি। বাংলাদেশে কখনো অন্য রাষ্ট্রের রাজনীতি চলতে পারে না।’
অনুষ্ঠানে গণহত্যা জাদুঘরের এক দশক পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার দেওয়া হয়।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি দেশের একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর। ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার নির্ভুল ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও অন্বেষণ এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্ম তথা সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে খুলনাতে যাত্রা শুরু করেছিল গণহত্যা জাদুঘর।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণহত্যা জাদুঘর ট্রাস্টকে ২৬ সাউথ সেন্ট্রাল রোডে ৩০ শতক জমিসহ একটি পুরোনো দ্বিতল বাড়ি প্রদান করেন। সেখানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অধীন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে অত্যাধুনিক গণহত্যা জাদুঘর ভবন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩ নভেম্বর ২০২৩ নতুন ভবনটি উদ্বোধন করেন।
ছয়তলা এই ভবনে মোট তিনটি গ্যালারি রয়েছে। সেখানে গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ, ভাষা আন্দোলন, শহীদ বুদ্ধিজীবী, একাত্তরের ঘাতক দালাল ও শরণার্থীদের নানা নিদর্শন ও অমূল্য দলিল প্রদর্শিত হচ্ছে। জাদুঘরে রয়েছে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অসংখ্য আলোকচিত্র এবং ভাস্কর্য। নতুন এই ভবনে রয়েছে একটি অত্যাধুনিক আর্কাইভ এবং বিশাল লাইব্রেরি।