ভোলা–বরিশাল রুটে দ্বিতীয় দিনের মতো লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে বরিশালগামী কোনো লঞ্চ চলতে দেখা যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে বরিশালগামী স্পিডবোট চলাচল স্বাভাবিক হলেও প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
এদিকে ভোলার অভ্যন্তরীণ উপজেলাগুলোতে আজ সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ভোলা থেকে চট্টগ্রামগামী বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে লঞ্চ, ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে ফেরি চলছে। এর আগে গতকাল সকাল থেকে ভোলা-বরিশাল রুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকেলের দিকে যাত্রীদের চাপে স্পিডবোট চালু হলেও লঞ্চ চালু হয়নি। বিএনপির নেতারা বলছেন, ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করেই নৌযানগুলো বন্ধ করা হয়েছে।
ভোলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। শুক্রবার হলেও পরীক্ষাসহ নানা রকম জরুরি কাজে অনেকে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিপাকে পড়েছেন।
আজ সকাল সাতটার দিকে ভোলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, অপরাজিতা নামের একটি ফেরি পণ্যবাহী গাড়ি নিয়ে বরিশালের লাহারহাট থেকে ছেড়ে এসে ভোলার ভেদুরিয়া ঘাটে নোঙর করেছে। পরে আবার সাড়ে আটটার দিকে ফেরিটি পণ্যবাহী যানবাহন নিয়ে ছেড়ে যায়। ওই ফেরিতে অনেক যাত্রীও দেখা গেছে। এর মধ্যে লাহারহাট থেকে ছেড়ে আসা একটি স্পিডবোট ভেদুরিয়া ফেরিঘাটে এসে যাত্রী নামাল।
ওই স্পিডবোটের এক যাত্রী মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, অনেকক্ষণ বসে থাকার পর জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে এই স্পিডবোটে উঠেছেন তিনি। স্বাভাবিক সময়ে স্পিডবোটের ভাড়া ১২০ টাকা। অথচ আজ অনেক বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
ফরিদুলের সঙ্গে আলাপের সময় দেখা গেল একটি স্পিডবোটে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। ওই স্পিডবোটে ওঠা সবাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এর মধ্যে এক ছাত্র বললেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে যেতে হবে। তাই জনপ্রতি ৪০০ টাকা দর–কষাকষি করছি। ভেদুরিয়া-লাহারহাট স্পিডবোটে পাঁচ-সাত মিনিটের পথ। ভাড়া ১২০ টাকা। এখন দাবি করছে ৫০০ টাকা।’
ফেরিঘাটের তিনজন স্পিডবোটমালিক বলেন, শুক্রবার এমনিতেই যাত্রীর সংখ্যা কম থাকে। এর ওপর স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতির নির্দেশ আছে, জরুরি যাত্রী ছাড়া পার করা যাবে না। ধরা পড়লে জরিমানা গুনতে হবে। এ কারণে খরচ পোষালে বোটে যাত্রী তোলা হচ্ছে।
এদিকে ভোলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। শুক্রবার হলেও পরীক্ষাসহ নানা রকম জরুরি কাজে অনেকে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিপাকে পড়েছেন।
ভোলার মাদ্রাসাশিক্ষক নাজমুস সাকিব বলেন, চরফ্যাশনে বিএড পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। তবে বাস বন্ধ। এখন বিকল্প উপায়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চরফ্যাশনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক পারভেজ খান ও ইজারাদার ইউসুফ পাটওয়ারী বলেন, ভোরে পণ্যবাহী ট্রাক বোঝাই করে একটি ফেরি লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এ ছাড়া ঢাকা ও লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে একাধিক যাত্রবাহী লঞ্চ ছেড়ে গেছে। কিন্তু বরিশাল থেকে কোনো লঞ্চ আসেনি। তবে ইলিশা ফেরিঘাটে ভোলার অভ্যন্তরীণ পথে চলাচলকারী কোনো যাত্রীবাহী বাসও আসেনি। তবে চট্টগ্রামগামী চারটি যাত্রীবাহী বাস ফেরির জন্য অপেক্ষা করছে।
ভোলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, আজ সকাল ছয়টা থেকে রোববার ছয়টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা ভোলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কেন বাস বন্ধ রাখা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ভোলা থেকে নৌযান ছেড়ে যাওয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। তারপরও কেন ভোলা-বরিশাল নৌপথে লঞ্চ চলছে না, সেটি বলতে জানেন না।