নরসিংদীর শিবপুরে দৌলত খান (৫২) নামের একজন পোলট্রি ফিড ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের দত্তেরগাঁও গ্রামে ব্যবসায়ীর নিজ বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দৌলত খান নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের দত্তেরগাঁও গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় বাজারে পোলট্রি ফিডের ব্যবসা করতেন। গতকাল রাতে হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে দুই সন্তান ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
নিহত ব্যবসায়ীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সড়ক আটকে একজন রিকশাচালকের টাকা-মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তরুণ তামিম ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সাহাবুদ্দীন বাজারে ডাকা সালিসে তামিমের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন দৌলত খান। এতে দৌলত খানের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিলেন তামিম। এ ছাড়া তামিমের বাবা শ্যামল মিয়ার কাছে প্রায় আট লাখ টাকা পেতেন ব্যবসায়ী দৌলত খান। ওই পাওনা টাকাও ফেরত দিচ্ছিলেন না শ্যামল।
গতকাল রাত একটার দিকে পরিবারের কেউ বাড়ি না থাকার সুযোগে তামিম ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল নিয়ে দৌলত খানের বাড়িতে যান। বাড়ির আঙিনায় থাকা পোলট্রি ফিড বহনকারী ট্রাকের ব্যাটারি চুরির চেষ্টা করেন। চুরি ঠেকাতে পোলট্রি ফার্মের দুই কর্মচারীকে নিয়ে সেখানে যান দৌলত খান। এ সময় দুই কর্মচারীর সামনেই দৌলত খানকে চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে শুরু করেন তাঁরা। তাঁর চিৎকারে বড় ভাই দেলোয়ার খানসহ অনেকেই এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাঁদের হত্যার হুমকি দেন। ওই সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই দৌলত খানের মৃত্যু হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।
খবর পেয়ে শিবপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। রাতে তাঁর লাশ থানায় এনে রাখা হয়। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর লাশ থানা থেকে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহত দৌলত খানের স্ত্রী রোকেয়া খানম বলেন, ‘তাঁর হাত, পা, বুকসহ শরীরের অন্তত ২২ জায়গায় চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে। রক্তে পুরো শরীর লাল হয়ে গিয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী তাঁর বড় ভাই দেলোয়ার খান। তিনি বাধা দিতে গেলে তাঁর গলায়ও চাপাতি ধরে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমি অসহায় হয়ে গেলাম। তামিমসহ যারা আমার স্বামীকে এত নির্মমভাবে খুন করল, তাদের ফাঁসি চাই।’
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে ব্যবসায়ী দৌলত খানকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।