বান্দরবানের ‍রুমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভবণটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি পাঁচ বছরেও। সম্প্রতি তোলা
বান্দরবানের ‍রুমা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভবণটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি পাঁচ বছরেও। সম্প্রতি তোলা

বান্দরবান

পাঁচ বছরে শুরুই হয়নি দুই বিদ্যালয় ভবন ও আট ছাত্রাবাসের নির্মাণকাজ

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে বান্দরবান জেলার সাত উপজেলার আটটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের একাডেমিক ও ছাত্রাবাস ভবন নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয় পাঁচ বছর আগে। বিভিন্ন মেয়াদে এসব বিদ্যালয়ের জন্য ২২টি ভবন তৈরির কথা রয়েছে। তবে এখনো দুটি বিদ্যালয়ের ভবন ও আটটি ছাত্রাবাস নির্মাণের কাজ শুরুই হয়নি। ভবন নির্মাণে ধীরগতির কারণে ব্যয়বহুল এই প্রকল্প কবে শেষ হবে, তা কেউ জানেন না।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বান্দরবান উচ্চবিদ্যালয়, বান্দরবান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রুমা উচ্চবিদ্যালয়, থানচি উচ্চবিদ্যালয়, রোয়াংছড়ি উচ্চবিদ্যালয়, লামা উচ্চবিদ্যালয়, আলীকদম উচ্চবিদ্যালয় ও নাইক্ষ্যংছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের জন্য আটটি ছয়তলা বিদ্যালয় ভবন, আটটি পাঁচতলাবিশিষ্ট ছাত্রাবাস এবং ছয়টি তিনতলার ঊর্ধ্বমুখী একাডেমিক ভবনসহ মোট ২২টি ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে। এ জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৭৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে থানচি ও লামা উচ্চবিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের কাজ শুরু হয়নি। শুরু হয়নি সাত উপজেলার আটটি বিদ্যালয়ের আটটি ছাত্রাবাসের কাজও।

শুরুতে ২০১৯ সালে রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি ও আলীকদম উচ্চবিদ্যালয় ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুই বছর মেয়াদে চারটি বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ ২০২১ সালে শেষ করার কথা ছিল। তবে ভূমি জটিলতায় থানচি উচ্চবিদ্যালয় ভবনের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। রুমা ও আলীকদম উচ্চবিদ্যালয় ভবনের কাজ ৮৫ শতাংশ এবং রোয়াংছড়ি উচ্চবিদ্যালয় ভবনের কাজ ২৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজের ৩০ শতাংশও অগ্রগতি হয়নি। অন্যদিকে রুমা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ ৫ বছরে ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।

শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, কাজের প্রাক্কলিত মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা। এর মধ্যে দুটি বিদ্যালয় ও আটটি ছাত্রাবাসের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে না পারায় মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। জায়গার সমস্যা, পুরোনো ভবন অপসারণে জটিলতা, দুর্গমতা এবং অশান্ত পরিস্থিতির কারণে কাজের অগ্রগতি কম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর মধ্যে কেবল তিনতলাবিশিষ্ট পাঁচটি একাডেমিক ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু পাঁচতলাবিশিষ্ট আটটি ছাত্রাবাসের নির্মাণকাজ দূরের কথা, এখনো দরপত্রই আহ্বান করা হয়নি। একইভাবে লামা উচ্চবিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজে দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। আগামী জুনে কাজের মেয়াদ শেষ হবে। এ জন্য কাজ শুরু করতে না পারা আটটি ছাত্রাবাস, লামা ও থানচি উচ্চবিদ্যালয় ভবনের নির্মাণকাজের চলমান প্রক্রিয়া বাতিল এবং নতুনভাবে মেয়াদ নবায়ন করে নির্মাণ অনুমোদনের জন্য  প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদিত হলে নবায়ন করা মেয়াদে কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।

নাইক্ষ্যংছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ গত বছর অক্টোবরে শুরু হয়েছে। এক বছরে এ পর্যন্ত ১১ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। বান্দরবান সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও বান্দরবান সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করা হলেও কাজ শুরু হয়নি। সব প্রক্রিয়া শেষ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, কাজ শুরু করা হবে বলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানিয়েছেন।

থানচি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, ‘পাঁচ বছর আগে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে কার্যাদেশ প্রদানের ব্যাপারে শুনেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বিদ্যালয়ের ভূমির কোনো জটিলতা নেই। ছাত্রাবাসের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে কি না, জানানো হয়নি। তা ছাড়া বিদ্যালয়ের সীমানাদেয়ালের কাজের মাটি কাটার পর আর কোনো কাজ হয়নি।’ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহেলার কারণে কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক।

রুমা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল আজম বলেন, ছাত্রাবাস পুরোনো ভবন ভেঙে করতে হবে বলে জটিলতা হচ্ছে। আর বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে সময়মতো বাজেট বরাদ্দের জটিলতার কথা বলা হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করে অন্তত দুটি তলা বুঝিয়ে দেওয়ার তাগিদ দিয়েও কোনো কিছু হয়নি।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, কাজে তাঁদের কোনো অবহেলা নেই। পুরোনো কাঠামো ভেঙে নতুন ভবন করতে অনেক দীর্ঘসূত্রতা, করোনা মহামারি, নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে সমস্যাসহ নানা কারণে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। তবে এবার একটা পর্যায়ে এসেছে এবং কাজের অগ্রগতি হবে। জুনের মধ্যে কয়েকটি বিদ্যালয় ভবন হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।