রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘী পীরপাল ডিগ্রি কলেজ মাঠে বসানো অস্থায়ী কোরবানির পশুরহাট। গতকাল শুক্রবার সন্ধার আগে
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘী পীরপাল ডিগ্রি কলেজ মাঠে বসানো অস্থায়ী কোরবানির পশুরহাট।
গতকাল শুক্রবার সন্ধার আগে

বড় গরুর বিক্রি কম, দামও সহনীয়

রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে শেষ পর্যায়ে কোরবানির পশুর হাটবাজারগুলো পশু–মানুষে গিজগিজ করছে। সবাই ব্যস্ত কোরবানির পশু কেনাবেচায়। কিন্তু এবারে বড় গরুর বিক্রি কম। বিক্রি হচ্ছে ছোট ও মাঝারি গরু। দামও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। হাটবাজারে গরুও উঠছে প্রচুর। তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বিক্রেতারা বলছেন, এবারের কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি হচ্ছে কম। গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু পুষে তাঁরা তেমন লাভ করতে পারছেন না।

সরকারি পরিসংখ্যানে ওই দুই উপজেলায় ১৯টি অস্থায়ী ও স্থায়ী পশুর হাট বসছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাস্তবে গ্রামগঞ্জের হাটবাজারগুলোয় স্থানীয় কতিপয় লোকজন উদ্যোগ নিয়ে কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট বসিয়ে কেনাবেচা করছেন। এই হিসাবে দুই উপজেলায় অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে অর্ধশতাধিক। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, এবারে ওই দুই উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৫০ হাজার ৮৬৩টির। প্রস্তুত রয়েছে ৫৯ হাজার ৫৬৫ পশু।

শুক্রবার ছিল বদরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘীর হাট। সেখানে দুপুরের দিকে বসে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আশপাশের গ্রাম থেকে ওই হাটে পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল সাত থেকে আট হাজার।

হাটে কথা হয় লালদিঘী গ্রামের কৃষক ওমর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মোর গরুটার ওজন কমপক্ষে তিন মণ হইবে। দাম করোচে ৮৩-৮৪ হাজার টাকা। গরুটাক দুই বছর থাকি পালতে খরচ হইচে ৭০ হাজার টাকা। তা হইলে কন তো, গরু পুষি লাভটা কী? বাজারোত গরুর খাবারের দাম ২-৩ গুণ বাড়ি গেইচে। সেই তুলনায় গরুর দাম পাওচি না।’

ওই হাটে কোরবানির জন্য গরু কিনতে এসেছিলেন বদরগঞ্জ পৌরসভার মোস্তাফিজার রহমান। তিনি বলেন, ‘গ্রামের হাটে দেশি গরু পাওয়া যায়। আমরা কোরবানির জন্য ছোট গরু কিনব। এই হাটে দেশি গরু উঠছে প্রচুর। দামটাও কম মনে হচ্ছে।’

উপজেলার পাঠানের হাট এলাকার গরু ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে গরু কেনাবেচা করি। এবার গ্রামে ঘুরে ২৫টি গরু কিনেছি। এর মধ্যে চার থেকে পাঁচ মণ ওজনের গরু আছে ৯টি। কেন জানি এবারের ঈদে বড় গরুর চাহিদা কম। ছোট ও মাঝারি (দুই থেকে তিন মণ ওজন) গরুর চাহিদা আছে। কিন্তু দামটা তুলনামূলক বেশ কম। ইতিমধ্যে ২টি বড় ও ১১টি ছোট গরু বিক্রি করেছি। সব খরচ মিটিয়ে তেমন লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বদরগঞ্জের ট্যাক্সের হাট ও শেখেরহাটেও গতকাল বৃহস্পতিবার অস্থায়ী গরুর হাট বসেছিল। এ দুই হাটেও কোরবানির গরু তেমন বিক্রি হয়নি। দামটাও ছিল সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে। তারাগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন, ‘কোরবানির গরু বিক্রি করে এবার তেমন লাভ করতে পারছি না। আবার লস যে হচ্ছে, সেটাও বলা যাবে না। বলা চলে, গরু কেনাবেচা করে ঘরঘর (সমান সমান) হচ্ছে।’

আজ শুক্রবার ছিল তারাগঞ্জের সবচেয়ে বড় কোরবানির হাট তারাগঞ্জ হাট। এই হাটেই হচ্ছে তারাগঞ্জ উপজেলার কোরবানির গরু কেনাবেচার বড় শেষ হাট। হাটের ইজারাদার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গতকাল হাটে কোরবানির পশুর দাম উঠেছিল ২৫ থেকে ২৬ হাজার। কোরবানির গরু ক্রেতা মেনানগর গ্রামের সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গরু পালতে যত খরচ, সেই হিসাবে হাটে গরুর দাম বেশি বলা যাবে না। আমি ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার ভেতর গরু কিনব। আসলে হাটে ক্রেতার চেয়ে গরু উঠেছে বেশি।’

হাটের ইজারাদার শহিদার রহমান বিকেলে বলেন, ‘আমরা আশা করছিলাম যে কোরবানির শেষ হাটে গরু বিক্রি হবে কমপক্ষে আট হাজার। কিন্তু বাস্তবে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত আড়াই হাজার গরু বিক্রি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। গরুর দাম যে বেশি, তা–ও নয়। কেন জানি বিক্রি হচ্ছে কম। মনে হচ্ছে, সাধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারাগঞ্জের ডাঙ্গিরহাট ও চিকলিরহাটে গতকাল বৃহস্পতিবার বসেছিল অস্থায়ী গরুর হাট। কোরবানি উপলক্ষে গ্রামের কয়েক ব্যক্তি উদ্যোগ নিয়ে ওই দুটি অস্থায়ী হাট বসিয়েছেন। ডাঙ্গিরহাটের উদ্যোক্তা সরিফুল ইসলাম বলেন, আশপাশের অনেকেই গরু বিক্রি করতে এখানে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে খুব কম।