রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামির ফাঁসি যেকোনো সময় কার্যকর করা হতে পারে। ইতিমধ্যে ফাঁসির দড়ি পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। কারাগার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কারা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো তথ্য জানায়নি।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক এস তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম।
রাষ্ট্রপতির কাছে দুই আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি ৫ জুলাই ডাকযোগে রাজশাহী কারাগারে এসে পৌঁছায়। তখন কারা কর্তৃপক্ষ বলেছিল, জেল কোড অনুযায়ী এ ধরনের চিঠি পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হয়। কোনো ব্যত্যয় না ঘটলে চলতি মাসের শেষ দিকে ওই দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামির স্বজনেরা রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে তাঁরা স্বজনদের কাছে মাফ ও দোয়া চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
সাক্ষাৎ শেষে জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। পরিবারের সব সদস্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন। বিচার নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
জাহাঙ্গীরের বাবা আজিম উদ্দিন বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছে। মাঝখানে তারকাঁটা ছিল। ছেলেকে ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। ছেলে দোয়া চেয়েছে।’
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে অধ্যাপক এস তাহের খুন হন। ম্যানহোল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২২ মে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক এস তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের আত্মীয় আবদুস সালামকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য দুই আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সীকে খালাস দেন আদালত। আপিলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামি নাজমুল আলম ও আবদুস সালামের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সকালে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।