বরিশাল

গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঘরছাড়া 

বরিশালে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেক নেতা কারাগারে।যাঁরা বাইরে আছেন, তাঁরাও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

বরিশাল জেলার মানচিত্র
বরিশাল জেলার মানচিত্র

গ্রেপ্তার ও মামলায় জড়িয়ে বরিশালে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দলটির মহানগর ও জেলা নেতাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন। আবার যাঁরা বাইরে আছেন, তাঁরাও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা এখন গ্রেপ্তার এড়াতে মুঠোফোন পর্যন্ত বন্ধ রাখছেন। কর্মীদের অবস্থাও একই।

গত ১২ দিনে জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন থানায় নাশকতার অভিযোগে ২২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৮২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে আর অজ্ঞাতনামা আসামি ৫৭৫ জন। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯৮ জন। গ্রেপ্তার নেতাদের মধ্যে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খানসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা আছেন।

নেতা-কর্মীরা পালিয়ে বেড়ালেও অবরোধের পক্ষে প্রতিদিনই তাঁরা ঝটিকা মিছিল, সড়কে আগুন জ্বেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং রাতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ফটকে তালা ঝুলিয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দিচ্ছেন। বুধবার রাতে বরিশাল নগরের বটতলা চৌমাথা এলাকায় এবং নগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিঅ্যান্ডবি রোডের আমতলার মোড়ে মশালমিছিল করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

দলটির মহানগর কমিটির অন্তত তিনজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সরকার যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তাতে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে নেতা-কর্মীদের গা ঢাকা দেওয়ার কৌশল নেওয়ার বিকল্প নেই। তবে আন্দোলনে মাঠেই আছেন তাঁরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবেন বলেও জানান ওই নেতারা।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) জাহিদুর রহমান বলেন, আন্দোলন যেভাবে গতি পাচ্ছে, তাতে এখন আর নেতাদের নির্দেশের প্রয়োজন নেই। কর্মীরাই এই আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আপাতত এই কৌশলেই আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। দলীয় শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনাও এমন। এই নেতা আরও বলেন, শুরুতে গ্রেপ্তার ও দমন-পীড়নের কারণে যে ধরনের আতঙ্ক নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল, দিন যত যাচ্ছে, সেটা তত কমছে। এখন পাড়া-মহল্লা ও মহাসড়কে যে যেভাবে পারছেন পিকেটিং করছেন। এতে কারও নির্দেশের প্রয়োজন হচ্ছে না। জনগণও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিচ্ছেন নেতা-কর্মীদের। এটা একসময় এমন হবে যে কেউ আর গ্রেপ্তারের ভয় না করেই রাজপথে নেমে আসবেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গত ২৮ অক্টোবরের পর ১২ দিনে যে ২২টি মামলা হয়েছে, তাতে আসামি করা হয়েছে ৮২৫ জনকে। এর মধ্যে বরিশাল জেলার ৪টি থানায় ১৩টি এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ৪ থানায় ৮টি মামলা করা হয়েছে।

জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিদর্শক জিয়াউল আহসান বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত জেলার ৪টি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও নাশকতার বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়েছে। এতে নামধারী আসামির সংখ্যা ১২৮ ও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২৪০ জনকে। মামলায় প্রায় ৭০ আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিদর্শক শিশির কুমার পাল বলেন, মেট্রোপলিটনের ৪ থানায় ২৯ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত করা ৮ মামলায় বিএনপির ২৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব মামলায় নামধারী ৮০ জন ও অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার চারজনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। অন্য আসামিরা কারাগারে আছেন।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এ দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর দলটির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নির্বিচার বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।