২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হন মাহবুবা পারভীন। ওই সময় তিনি ছিলেন ঢাকা জেলা (বৃহত্তর) স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। গ্রেনেড হামলার ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
বর্তমানে ঢাকা জেলা (উত্তর) স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মাহবুবা পারভীন। গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, ‘আজ আমি প্রায় পঙ্গু, জীবন্ত লাশ। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়ার পর আমি পাঁচ বছর হুইলচেয়ার ব্যবহার করেছি।
সাত বছর ক্রাচে ভর দিয়ে চলাফেরা করেছি। স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় মধ্যরাতে ছটফট করলেও শুধু হাসপাতালে যাওয়ার জন্য নিজস্ব কোনো গাড়ি না থাকায় আমি যেতে পারি না। স্প্লিন্টারের জ্বালাপোড়ায় রাতে ঘুমাতে পারি না। বলতে গেলে আমি ধুঁকে ধুঁকে মরে যাচ্ছি।’
সাভারের ব্যাংক কলোনিতে মাহবুবা পারভীনের নিজ বাসায় গত শনিবার বিকেলে তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে কথা হয়। সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কয়েকবার থমকে যান তিনি। সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি এখনো তাঁকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে।
মাহবুবা পারভীন জানালেন, দিনের বেলা স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা অনেকটা কম থাকলেও রাতের বেলায় বেড়ে যায়। শরীরে ১ হাজার ৭৯৭টি স্প্লিন্টার বয়ে বেড়ানো মাহবুবার চাওয়া, গ্রেনেড হামলার রায়ের বাস্তবায়ন। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর আগে আমার প্রত্যাশা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ের বাস্তবায়ন দেখে যাওয়া। এটিই হবে আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।’
কথায় কথায় বোঝা গেল, দলের স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে মনের ভেতরে ক্ষোভ জমেছে মাহবুবার। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সব সময়ই ভালোবাসা পেলেও স্থানীয়ভাবে রাজনীতিতে বারবারই তিনি উপেক্ষার শিকার হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, জন্মস্থান সাভারে তাঁকে মূল্যায়ন করা হয়নি। সেখানে দলীয় কর্মসূচি হলে কেউ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেন না।
বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে ‘হাইব্রিড’ নেতা-কর্মীদের কারণে তৃণমূলে ত্যাগী নেতা-কর্মীরা উপেক্ষিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ মাহবুবার।
তিনি বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে যখন আমরা রাজনীতি করেছি, তখন আমাদের রাজনীতি ছিল দলের জন্য প্রয়োজনে নিজের রক্ত দিয়ে দেওয়া। বিরোধী দলে থাকাকালীন সরকারি দলের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আগে ত্যাগের রাজনীতি ছিল, এখন ভোগের রাজনীতি হচ্ছে। হাইব্রিডরা আজ দলীয় কর্মসূচিতে চেয়ার পাচ্ছে। ত্যাগীরা হচ্ছে বঞ্চিত।’