কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কেরর বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। যানবাহনগুলোকে চলতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। খানাখন্দের মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই অকেজো হয়ে যায় গাড়ি। সম্প্রতি মহাসড়কের কটিয়াদীর চড়িয়াকোনা এলাকায়
কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কেরর বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। যানবাহনগুলোকে চলতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। খানাখন্দের মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই অকেজো হয়ে যায় গাড়ি। সম্প্রতি মহাসড়কের কটিয়াদীর চড়িয়াকোনা এলাকায়

কিশোরগঞ্জ-ভৈরব মহাসড়ক

সাড়ে তিন বছরেই বেহাল

সড়কজুড়ে খানাখন্দ। উঠে গেছে পিচঢালাই। কোথাও কোথাও সড়কের এক পাশ দেবে গেছে। আবার অন্য পাশ ফুলেফেঁপে উঠেছে। কোথাও আবার ইট দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। অথচ ২০১৯ সালের শেষ দিকে ১৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ প্রায় ৬০ কিলোমিটার কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কটির সংস্কারকাজ করে। সাড়ে তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কটির প্রায় ১৫ কিলোমিটার আবারও খানাখন্দে ভরে গেছে। কোথাও এবড়োখেবড়ো হয়ে দেবে গেছে। কোথাও আবার পিচ ও ইটের টুকরা স্তূপ হয়ে আছে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে চলাচল করার সময় ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অনেক সময় যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ ও বহন করা মালামাল। এ ছাড়া সড়কটির এ নাজুক পরিস্থিতির কারণে শুষ্ক মৌসুমে ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। বৃষ্টিতে সেই ধুলা পরিণত হয় কাদায়। তখন ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। তাই সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি সবার।

একবার এ সড়ক দিয়ে গেলে দ্বিতীয়বার আর যেতে ইচ্ছা হয় না। অটোরিকশা খুব ধীরগতিতে চালাতে হয়, না হয় উল্টে যায়।
শফিকুল ইসলাম, অটোরিকশার চালক

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কটির কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। এর মধ্যে সদরের লতিবাবাদ, চৌদ্দশত, নান্দলা, পুলেরঘাট, মধ্যপাড়া, আচমিতা, মাইজহাটি, ঘিলাকান্দি, বানিয়াগ্রাম, কটিয়াদী, গাঙকূলপাড়া, চারিপাড়ায় এলাকায় সড়ক ফেটে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় পিচ ও ইট স্তূপ হয়ে আছে। এগুলোর অনেক জায়গা ইট দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোর অবস্থাও নাজুক।

এ ছাড়া কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাজিতপুরের উজানচর মোড়ের আগপর্যন্ত অন্তত তিন কিলোমিটার সড়ক পর্যন্ত এবড়োখেবড়ো হয়ে আছে। খানাখন্দের জায়গা দিয়ে গাড়ি ধীরে ধীরে চলাচল না করলে উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। অনেক সময় গাড়ি উল্টে গিয়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এরপর উজানচর মোড় পার হয়ে কুলিয়ারচরে শেষ হয়ে ভৈরব পর্যন্ত আরও অন্তত ১০ কিলোমিটার সড়কের অবস্থাও নাজুক। সব মিলিয়ে মহাসড়কটির কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা হলেও সওজ কর্তৃপক্ষের দাবি সাত কিলোমিটার সড়কের সমস্যা।

ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চল, কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয় এ আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে। এ সড়ক দিয়ে সব সময় শত শত ট্রাক, বাস, তেলবাহী লরি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে।

জহিরুল ইসলাম নামের কটিয়াদী এলাকার স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, আঞ্চলিক এ মহাসড়ক ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব এবং ঢাকার সড়কপথে যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে মালামাল নিয়ে দূরপাল্লার অনেক ভারী যানবাহন চলাচল করে। অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের সংস্কারকাজ মাত্র সাড়ে তিন বছর যেতে না যেতেই বেহাল হয়ে পড়েছে। নিম্ন মানের কাজের কারণে এমনটি হয়েছে।

শফিকুল ইসলাম নামের সিএনজিচালিত এক অটোরিকশার চালক বলেন, ‘সড়কের পিচ ফুলেফেঁপে উঠেছে ও মাঝখানে গর্ত সৃষ্টি হয়ে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। একবার এ সড়ক দিয়ে গেলে দ্বিতীয়বার আর যেতে ইচ্ছা হয় না। অটোরিকশা খুব ধীরগতিতে চালাতে হয়, না হয় উল্টে যায়।’

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের শেষের দিকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কটি ১৮ থেকে ৩০ ফুটে প্রশস্তকরণ করা হয়। প্রায় ৬০ ফুট সংস্কারকাজে ব্যয় হয় ১৮৮ কোটি টাকা। সওজ কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া জনদুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কটি ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত কিলোমিটার সংস্কারকাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে এখনো কার্যাদেশ পাওয়া যায়নি। কার্যাদেশ পেলে সংস্কারকাজ শুরু হবে।