চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাবেক এমপি গোলাম রাব্বানী, র‍্যাব কর্মকর্তাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত কলেজশিক্ষার্থী মতিউর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কানসাট বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা গোলাম রাব্বানীসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ (ক্রসফায়ার) কলেজশিক্ষার্থী মতিউর রহমান (২২) নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলাটি করা হয়েছে।

আজ সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ আমলি আদালতে নিহত মতিউরের ভাই শিবগঞ্জের বাজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. জেম আলী (৩৬) বাদী হয়ে এই হত্যা মামলা করেছেন। আসামিদের মধ্যে র‍্যাব-৫ চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোম্পানির তৎকালীন অধিনয়াক মেজর কামরুজ্জামান পাভেল, উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বিসারত আলী, গোলাম রাব্বানীর ভাই কানসাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান বেনাউল ইসলাম, গোলাম রাব্বানীর ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ ও এলাকার কয়েকজন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাও রয়েছেন।

আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুজ্জামান মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। বাদী আইনজীবী গোলাম কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি বিকেলে মতিউর রহমান, মো. শ্যামল ও মো. হযরত আলীসহ পাঁচজনকে বাজিতপুরের একটি বেগুনখেত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে যান। শিবগঞ্জ থানায় খোঁজ নিলে জানানো হয়, তাঁদের মধ্যে শ্যামল ও হযরতকে সন্ধ্যা থানায় সোপর্দ করা হয় এবং মতিউরসহ তিনজনকে র‍্যাবের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকাল সাতটায় শিবগঞ্জ থানার এসআই মাহবুবুর রহমান বাদীর এক মামাকে মুঠোফোনে বলেন, ‘তোমার ভাগনের লাশ শিবগঞ্জ থানায় আছে।’

তাৎক্ষণিকভাবে বাদী ও তাঁর ভাই মো. আলিম ও মো. হালিম থানায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন এবং দেখতে পান, লাশের বুকে ও পাঁজরে ৮-৯টি গুলির চিহ্ন ও বাঁ হাত ভাঙা। শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ব্যাপারে এসআই মাহবুবুরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘ভোররাতে র‍্যাব তোমার ভাইয়ের লাশ দিয়ে গেছে। এর বেশি কিছু জানি না।’ ওই সন্ধ্যায় লাশ হস্তান্তর করা হয়। বাড়ি নিয়ে গিয়ে এলাকার গোরস্তানে লাশ দাফন করা হয়।

বাদী জেম আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই নিহত মতিউর রহমান কানসাট সোলাইমান আলী ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। আমদের পরিবার বিএনপির সমর্থকমাত্র। কেউ কোনো কমিটির সদস্য ছিল না। শিবগঞ্জের খরকপুরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ভাই মারা গেছে বলে মিথ্যা প্রচার করে। আসলে হেফাজতে রেখে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। এত দিন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় মামলা করতে পারিনি। দণ্ডবিধির ৩৬৪/৩০২/৩৪ ধারার সঙ্গে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ১৫-এর উপধারা (২)-এ মামলা করা হয়েছে।’