আকস্মিক বন্যায় রবিউল আহসানের ৮৫ শতক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে তাঁর প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। রবিউলের মতো শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কয়েক হাজার মৎস্যচাষি এমন ক্ষতির শিকার হয়েছেন। উপজেলার মৎস্য বিভাগ হিসাব মতে, এবারের বন্যায় মৎস্য খাতে প্রায় ২৮ কোটি ১০ লাখ ১৯ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
রবিউল আহসানের বাড়ি নালিতাবাড়ীর জারুয়ারপাড় গ্রামে। গতকাল বুধবার বিকেলে তাঁর সঙ্গে হয়। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘সইন্ধা রাইতে বাড়ির পাশে পাহাড়ি ঢলের পানি ওঠা শুরু করল। বাড়িঘরে পানি উঠব, স্বপ্নেও ভাবছি না। মধ্যরাইতে বিরাট স্রোতে পানি বাড়িঘরে ওঠা শুরু করল। বাড়ির লগেই পুসকুনি (পুকুর) গড়াইয়া বাড়িঘরে হাঁটুপানি অইয়া গেলো। কষ্টে পালা (চাষ) মাছগুলা চক্ষের সামনে ভাইসা গেল কিন্তু ফিরাইবার পাইলাম না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দী আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে বন্যার পানিতে শত শত পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন মৎস্যচাষিরা।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় ও ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩ অক্টোবর রাত থেকে ভারী বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে বয়ে আসা ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতে পাহাড়ি ঢল নামে। এ সময় নদী দুটির বিভিন্ন অংশে সাড়ে ৪০০ মিটার বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে ঢলের পানিতে উপজেলার পোড়াগাঁও, নয়াবিল, নন্নী, রামচন্দ্রকুড়া, বাঘবেড় ইউনিয়ন ও পৌর এলাকা প্লাবিত হয়। ৫ অক্টোবর রাত থেকে উজানের পানি নিম্নাঞ্চল যোগানিয়া, মরিচপুরান, কলসপাড় ও রাজনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে উপজেলায় ২ হাজার ৮৭৫টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যায়। মৎস্য চাষিদের প্রায় ২৮ কোটি ১০ লাখ ১৯ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের মৎস্য চাষি সায়েদুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে পুকুর গড়িয়ে বাড়ি-ঘরের পানির সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। এতে পুকুরে চাষ করা প্রায় দেড় লাখ টাকার মাছ পানির সঙ্গে ভেসে যায়। ছয় মাস ধরে মাছগুলো বিভিন্ন খাদ্য বড় করা হয়েছিল। আগামী মাসে বিক্রির করার উপযোগী হতো। কিন্ত এর আগেই সব শেষ।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সারুয়ার হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে পরবর্তীতে তাঁদের সহযোগিতা করা হবে।