বরগুনার আমতলীতে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় মা-বাবাকে ডেকে নিয়ে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার রাতে উপজেলার চলাভাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রীর মা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
স্থানীয় জাহিদ মোল্লা নামের এক যুবক ও তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা-বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে তার চাচাতো ভাইও আহত হয়েছেন। তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল মুনয়েম সাদ বলেন, স্কুলছাত্রীর বাবার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন আছে। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বছর ধরে চলাভাঙ্গা গ্রামের জাহিদ মোল্লা ওই স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। ওই ছাত্রীর বাবার দাবি, তিন মাস আগে জাহিদ বাড়ি থেকে তাঁর মেয়েকে তুলে নিয়ে যান। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহায়তায় মেয়েকে উদ্ধার করেন। গতকাল সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে ওই ছাত্রীকে আবার উত্ত্যক্ত করেন জাহিদ। এর প্রতিবাদে ওই ছাত্রীর বাবা জাহিদকে মারধর করেন বলে জাহিদের স্বজনেরা দাবি করেন। এর জেরে গতকাল রাতে সালিসের কথা বলে ওই ছাত্রীর মা-বাবাকে ডেকে আনেন জাহিদের স্বজনেরা। পরে জাহিদ ও তাঁর স্বজনেরা তাঁদের হাতুড়িপেটা করে গুরুতর জখম করেন। এ সময় ওই ছাত্রীর চাচাতো ভাই তাঁদের বাঁচাতে গেলে তাঁকে পেটানো হয়। খবর পেয়ে স্বজনেরা তাঁদের উদ্ধার করে রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
স্কুলছাত্রীর বাবার বাড়ি ঢাকার সাভার উপজেলার বাজারশোন এলাকায়। দুই বছর আগে আমতলীর চলাভাঙ্গা গ্রামে জমি কিনে বসবাস শুরু করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করে বখাটে জাহিদ। প্রতিবাদ করায় আমাকে, আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে।’ তিনি বলেন, জাহিদ, তাঁর বাবা সাইফুল মোল্লা ও খালু সজল আকন তাঁকে পেটান। তিনি হাত-পা ধরেও রক্ষা পাননি। তাঁর বাড়ি এ এলাকায় না হওয়ায় তাঁকে ব্যাপক নির্যাতন করেন তাঁরা। তিনি এ ঘটনার বিচার চান।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত জাহিদ মোল্লা পলাতক। জাহিদের খালু সজল আকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ওই স্কুলছাত্রীর মা-বাবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। স্কুলছাত্রীর মা-বাবা প্রথমে আমার ভায়রার ছেলেকে মারধর করেছে। পরে আমাদের লোকজনের সঙ্গে তাদের মারামারি হয়।’ তিনি বলেন, ওই মেয়ের সঙ্গে তাঁর ভায়রার ছেলের (জাহিদ) ঝামেলা ছিল। স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে তা মিটমাট করা হয়। কী ঝামেলা ছিল, প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ঘটনায় আজ আমতলী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর মা। আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’