আবেদন করার পরও অনেকে পানির সংযোগ পাননি। যাঁদের পানির সংযোগ রয়েছে, তাঁরাও আছেন সমস্যায়।
চাহিদা অনুযায়ী পানির সরবরাহ না পাওয়ায় ভোগান্তিতে রয়েছেন বাগেরহাটের মোংলা পৌরসভার বাসিন্দারা। আবেদন করার পরও অনেকে পানির সংযোগ পাননি। সামনে শুকনো মৌসুমের সুপেয় পানির শঙ্কায় দিন কাটছে তাঁদের। অন্যদিকে যাঁদের পানির সংযোগ রয়েছে, তাঁরাও আছেন নানান সমস্যায়। শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
পৌরসভার বাসিন্দাদের কয়েকজন বলেন, অনেক দিন আগে পানির সংযোগ পাওয়ার জন্য পৌরসভা বরাবর আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনো সুরাহা হয়নি। সামনে শুকনো মৌসুম, জমিয়ে রাখা বৃষ্টির পানি প্রায় শেষ। কবে নাগাদ পানির সংযোগ পাবেন, তা এখনো অনিশ্চিত।
বর্তমানে পৌরসভা থেকে পানির সংযোগের সংখ্যা ২ হাজার ৭০০। এর মধ্যে ২ হাজার ৬০০টি খানা পর্যায়ে। বাকি ১০০টি সংযোগের মাধ্যমে ধর্মীয় উপাসনালয় ও মহল্লাভিত্তিক বিনা মূল্যে পানি সরবরাহ করা হয়। পৌরসভায় স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে প্রায় ১২ হাজারেও বেশি পরিবার রয়েছে।
পৌর এলাকার এক গৃহিণী রাবেয়া আক্তার (২০) বলেন, ‘আমার এক বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। ব্যবহার্য সব পানি আমার স্বামী মাথায় করে অন্যের বাড়ির থেকে আনেন। যখন তিনি কাজের জন্য এক দিনের বেশি সময় বাইরে থাকেন, তখন পড়তে হয় ভীষণ সমস্যায়। যদি আমরা পানির সংযোগ পেতাম, তাহলে আর চিন্তা থাকত না।’
তবে পানির সংযোগ পেলেও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ব্যবসায়ী সুলতান আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘গত বছর মার্চ মাসের পর থেকে তিন মাসের মতো ঠিকমতো পানি পাইনি। মাঝেমধ্যে যতটুকু পাওয়া যেত, তা এক প্রায় ব্যবহারের অযোগ্য। পানি ছিল ঘোলাটে ও দুর্গন্ধময়। সামনে আবারও সেই সময় আসছে।’
বিশুদ্ধ পানির অভাবে মোংলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহীন বলেন, হাসপাতালে সব সময় বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু বছরের একটা সময় পানি ঠিকমতো পাওয়া যায় না। এ কারণে হাসপাতালের সেবা প্রদানের স্বাভাবিকতায় ব্যত্যয় ঘটে। এ জন্য এবার ন্যানোটেকনোলজির পানি শোধন করার যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে হাসপাতালের নিজস্ব উদ্যোগে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু পানির উৎস কম থাকায় এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহমান বলেন, যে দুটি পুকুর থেকে পানি পরিশোধন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়, তার গভীরতা কমেছে। পুকুরগুলোয় বর্ষা মৌসুমে যতটুকু বৃষ্টির পানি ধরে রাখা সম্ভব, তা থেকে দৈনিক দুবার দেড় ঘণ্টা করে সেই পানি সরবরাহ করা হয়। মার্চ মাসের দিকে পুকুর দুটির পানি যখন তলানিতে চলে যায়, তখন বেশি পড়তে হয়। নদীতে লবনপানি আর বৃষ্টিহীনতার কারণে ঠিকমতো পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এ জন্য চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নতুন সংযোগ ও সারা বছর পর্যাপ্ত সুপেয় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা সোহান আহমেদ বলেন, বর্তমানে ৮৪ একর জায়গার ওপর ১ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য, ১ হাজার ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট গভীরতার দুটি পুকুর রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন ৩০ লাখ লিটার পানি পরিশোধন করে সরবরাহ করা হচ্ছে। সময়ের বিবর্তনে পুকুর দুটির গভীরতা কমেছে। গত বছরের শুরুতে পুনঃখননের জন্য বরাদ্দ চেয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। বর্তমানে ওই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। নতুন বরাদ্দ না পেলে, পুকুর পুনঃখনন না করতে পারলে পানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না।