গাছপালায় ঘেরা সুনসান নীরব গ্রাম। গ্রামের এক পাশে নদীর কাছাকাছি বিশাল এলাকাজুড়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ ধানখেত। এমন গাঢ় সবুজের মাঝখানে একটি জায়গায় চোখ আটকে যায়। সেখানে হাজারো ফুল মাথায় নিয়ে একা দাঁড়িয়ে আছে একটি পলাশগাছ। সেই গাছ দেখতে আসছেন দর্শনার্থীরা। কেউ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের সেলদিয়া গ্রামে আছে এই গাছ। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দাদের দাবি, বুঝতে শেখার পর থেকে গাছটিকে অনেক বয়সী হিসেবেই দেখছেন তাঁরা। গাছটির বয়স ঠিক কত বছর, সেই তথ্য কারও কাছে নেই।
গতকাল রোববার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মাঝখানে পলাশগাছটি দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকেই চোখে পড়ছে লাল ফুলের সৌন্দর্য। পাকা সড়ক থেকে কাঁচা সড়ক, তারপর হাঁটাপথে প্রায় আধা কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে জমির আলের শুরু। সেই আল ধরে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর পৌঁছানো যায় গাছের গোড়ায়। শুধু কাপাসিয়া নয়, আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার লোকজন গাছের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছেন।
গাছটির নিচে বেশ বড় করে কংক্রিটের বেঞ্চ তৈরি করে দিয়েছেন আশপাশের জমির মালিকেরা। সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন দর্শনার্থীদের কেউ কেউ। অনেকেই আবার গাছের ডালে চড়ে বসেছেন। কেউ গাছে থেকে ফুল ছিঁড়তে চাইলে অবশ্য অন্যরা বাধা দিচ্ছেন। মৌসুমের শেষ দিকে এসে গাছের অর্ধেকের বেশি ফুল ঝরে গিয়ে উঁকি দিচ্ছে ফল।
সেখানে আসা নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার মো. আবদুল্লাহ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই গাছের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি ও তাঁর চার বন্ধু গাছ দেখেতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে এসেছেন।
কাপাসিয়ার গ্যাসপুর থেকে মা, ভাই ও বোনের সঙ্গে এসেছে শিশু মো. আল ফাহিম। সে জানায়, মায়ের মোবাইলে সে গাছের ছবিটি দেখেছিল। নিজের চোখে গাছটি দেখতে এসে তার ভীষণ ভালো লাগছে।
শ্রীপুরের বরাম এলাকা থেকে গাছ দেখতে আসা মিজানুর রহমান বলেন, চারদিকে সবুজ থাকায় মাঝখানে গাছটি অন্য রকম সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। তিনি ইউটিউবে গাছের ভিডিও দেখেছেন। তাই বন্ধুবান্ধব নিয়ে দেখতে এসেছেন।
সেলদিয়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মজিদ বলেন, এ বছর প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ থেকে ২৫০ জন লোক গাছ দেখতে আসেন। এর আগে এই গাছ দেখেতে এত লোক আসেননি।
হেলাল উদ্দিন নামের স্থানীয় আরেকজন বলেন, জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে এই পলাশগাছে ফুল ফুটতে শুরু করে। থাকে দু–তিন মাস। এ বছর কয়েকজন পলাশগাছের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে শেয়ার করার পর এখানে লোকসমাগম হঠাৎ অনেক বেড়েছে।