জন্ম দেওয়ার তিন ঘণ্টা পরই সন্তানকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেখে পালিয়ে যান মা মমতা বেগম (১৮)। বিপদে পড়ে যান নবজাতকের বাবা রবিনুর মিয়া। একপর্যায়ে নবজাতককে কাপড়ে মুড়িয়ে তিনি চলে যান থানায়। আজ রোববার ঘটনাটি ঘটেছে বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে।
থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দেড় বছর আগে বিয়ে করেন রবিনুর মিয়া ও মমতা বেগম। বিয়ের পর থেকেই তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে আলাদা হয়ে যাবেন। তবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অনাগত সন্তান। তাই তাঁরা সন্তান জন্ম নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। আজ সকাল সাতটার দিকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছেলেসন্তান জন্ম দেন মমতা। জন্ম দেওয়ার ঘণ্টা তিনেক পর তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।
এরপর তাঁর স্বামী রবিনুর খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বেলা ১১টার দিকে সন্তান নিয়ে থানায় যান। তখন নবজাতক কান্না করছিল। ওসির কাছে আকুতি জানান স্ত্রীকে খুঁজে বের করার। পরে পাঁচ ঘণ্টা ধরে থানা-পুলিশের দুটি দল সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খুঁজে একটি সড়কের ধারে ওই নবজাতকের মাকে পায়। এরপর তাঁকে এনে বুঝিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝামেলা মিটিয়ে বাসায় পৌঁছে দেয় পুলিশ।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হাসান কবির বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পরই নবজাতকের জীবনের ঝুঁকির বিষয়টি চিন্তা করে আমি ও থানা-পুলিশের আরেকটি দল ওই মায়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে তাঁর খোঁজ করি। একপর্যায়ে বদরগঞ্জ-রংপুর সড়কের চেংমারি নামক স্থানে এক নারীকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হই ওই নারীই হচ্ছেন নবজাতকের মা। থানায় এনে নবজাতককে মায়ের কোলে তুলে দেওয়া মাত্র কান্না থেমে যায়।’
আবু হাসান কবির জানান, ওই দম্পতিকে বুঝিয়ে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্যের অবসান ঘটানো হয়েছে। তাঁরা উভয়ে পুলিশের প্রতি ভরসা রেখে নবজাতককে নিয়ে নতুন উদ্যমে সংসার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে ওই দম্পতির অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের কারণে নবজাতক জীবনের প্রথম দিনই ছয় ঘণ্টা কষ্টে ছিল।
নবজাতকের মা মমতা বেগম বলেন, ‘আমরা বছর দেড়েক আগে প্রেম করে বিয়ে করেছি। কয়েক মাস পরেই টুকটাক বিষয়কে কেন্দ্র করে সংসারে ফাটল দেখা দেয়। উভয়ে সিদ্ধান্ত নিই সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আমরা আলাদা হয়ে যাব। তাই ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান জন্ম দিয়ে সব মায়া ত্যাগ করে একাই বেরিয়ে পড়েছিলাম। ভাবছিলাম, কোথাও চলে যাব। কিন্তু থানার ওসির কথায় আমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছি। এখন সন্তানকে বড় করব। মরার আগপর্যন্ত কেউ কাউকে ছেড়ে যাব না। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
রবিনুর মিয়া বলেন, ‘ছাড়াছাড়ির যে সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরা নিয়েছিলাম, তা ছিল চরম ভুল। তবে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেই স্ত্রী আমাকে ও ভূমিষ্ঠ সন্তানকে ফেলে চলে যাবেন, তা ভাবিনি। এখন সব মনোমালিন্যের অবসান হয়েছে। ইনশা আল্লাহ বাকি জীবন একসঙ্গে কাটিয়ে দেব।’