শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় ধরা পড়ল তাঁর জারিজুরি

নোয়াখালীতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষা দিতে এসে ধরা পড়েন রুপেন দাশ নামের এই তরুণ
ছবি: সংগৃহীত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় অন্য একজনকে দিয়ে ‘প্রক্সি’ পরীক্ষা দেওয়ান তিনি। তাতে পার পেয়ে গেলেও ধরা পড়ে যান মৌখিক পরীক্ষা দিতে এসে। গতকাল রোববার বিকেলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত এই পরীক্ষার্থীর নাম রুপেন দাশ (২৮)। তিনি জেলার হাতিয়া উপজেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়নের রাজের হাওলা গ্রামের বাসিন্দা।

গতকাল সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অভিযুক্ত রুপেন দাশকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত দাশ। এরপর তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া প্রক্সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি এবং এই ঘটনায় জড়িত অন্যদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে প্রশাসন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাতিয়ার দুই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে আজ সোমবার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে।

দেবব্রত দাশ প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত চাকরিপ্রার্থীর দোষ স্বীকারের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাঁকে দণ্ডবিধি ১৮৬০–এর ১৮৮ ধারা অনুযায়ী সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রক্সি পরীক্ষার্থী ও অন্যান্য সহযোগীকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রুপেন দাশ ২০২০ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চাকরিপ্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষায় তাঁর আসন পড়েছিল নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া ভবনের নিচতলায়। গত ২০ মে লিখিত পরীক্ষা হয়। রুপেনের পরিবর্তে ওই পরীক্ষায় অংশ নেন অন্য একজন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষা দিতে আসেন রুপেন দাশ নিজেই। এ সময় পরীক্ষা বোর্ডের সদস্যরা লিখিত পরীক্ষার খাতার সঙ্গে রুপেনের হাতের লেখায় গরমিল দেখতে পান। এতে তাঁদের সন্দেহ হয়।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হওয়ায় ওই পরীক্ষার্থীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তিনি অন্য একজনের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কথা স্বীকার করেন। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাঁকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক চাকরিপ্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার সময় ওই কেন্দ্রে প্রক্সি দেওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনা দেখতে পান তিনি। জালিয়াতির সঙ্গে হলে দায়িত্ব পালনকারী কোনো শিক্ষক জড়িত রয়েছেন বলে তাঁর সন্দেহ।

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, মৌখিক পরীক্ষা দিতে এসে ধরা পড়া রুপেন দাশের স্বীকারোক্তিতে হাতিয়ার দুজন শিক্ষক জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের আজ ডেকে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।