‘আয় জাগা–সম্পত্তি কিছু ন চাই, আর পুতরে আনি দে (আমি জায়গা–সম্পত্তি কিছু চাই না, আমার ছেলেকে এনে দাও),’ ঘরের মেঝেতে বসে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে এভাবে বিলাপ করতে থাকেন শাহনাজ আক্তার। তাঁকে ঘিরে বসে আছেন স্বজনেরা। কেউ বিলাপ করছেন আর কেউ শাহনাজকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরপর চিৎকার দিয়ে উপস্থিত সবাইকে বলছেন তাঁর বুকের ধন জিয়াউল হক সজীবকে (২১) ফিরিয়ে দিতে।
আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামের আবদুল লতিফ মাস্টারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এই চিত্র। আজ দুপুরে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের যে ১১ আরোহী নিহত হন, তাঁদের একজন জিয়াউল। এই ঘটনায় আহত হন অন্তত পাঁচজন।
জিয়াউল নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজে গণিত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশে আরএনজে কোচিং সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতেন। দুপুরে দুর্ঘটনায় হতাহত সবাই এই কোচিং সেন্টারের ছাত্র–শিক্ষক। তাঁদের সবার বাড়ি খন্দকিয়া গ্রামে।
জিয়াউলের মা বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, সকাল সাতটায় তাঁর ছেলে মিরসরাইয়ে ঝরনা দেখতে কোচিং সেন্টারের সবার সঙ্গে যান। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে মায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তাঁকে সুন্দর লাগছে কি না। পরনে প্যান্ট, গেঞ্জি ও কেডস ছিল জিয়াউলের। মা বলেছিলেন, অনেক সুন্দর লাগছে।
এসব কথা বলতে না–বলতে আবার নিজের বুক চাপড়াতে থাকেন শাহনাজ আক্তার। তিনি বলছিলেন, ‘আমার মাস্টার সজীব কই? মাস্টার সজীব কই?’ উপস্থিত স্বজনদের কারও মুখে উত্তর নেই। সবার চোখ থেকে ঝরছে পানি।
নিহত ব্যক্তির ছোট বোন শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইয়া কোচিং সেন্টারে পড়ানোর কারণে এলাকায় অনেকে মাস্টার সজীব হিসেবে ডাকেন। আমার মা–ও ডাকেন মাস্টার সজীব। ভাইয়াকে ভালো শিক্ষক বানানোর স্বপ্ন ছিল মায়ের।’
জিয়াউলের বাবা আবদুল হামিদ স্থানীয় একটি মুদিদোকানে চাকরি করেন। তাঁর দুই ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে সজীব বড়। আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলে পড়ালেখা শেষ করে মানুষের মতো মানুষ হবে। পরিবারের হাল ধরবে। তার আগেই চলে গেল। আমার সব শেষ।’
জিয়াউলের ঘরের ভেতর যেমন মানুষের ভিড়, তেমনি ঘরের সামনে রাস্তায় তাঁর বন্ধু ও এলাকার লোকের ভিড়। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, এলাকায় ভালো ছেলে ছিল সজীব। কোচিং সেন্টারে পড়াতেনও ভালো। তাঁর মতো মেধাবীকে হারানোর শূন্যতা পূরণ হবে না এই গ্রামে।