কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের নদ-নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে উত্তরের হিমেল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এতে ঠান্ডার তীব্রতা বেড়েছে। মমেনা বেগম (৬৫) সেই ঠান্ডা উপেক্ষা করে আজ বৃহস্পতিবার সকালে কম্বল নিতে আসেন। শীতের পোশাক হিসেবে মমেনা বেগম শরীরে স্বামীর পুরোনো একটি লুঙ্গি পেঁচিয়েছেন। তিনি শীতে কাঁপছিলেন। এ সময় বন্ধুসভার বন্ধুরা তাঁর শরীরে একটি কম্বল জড়িয়ে দিতেই তাঁর চোখমুখে ফুটে উঠে খুশির ঝিলিক। বলেন, ‘হামরা নদীভাঙা মানুষ। বানের (বন্যা) সময় নদীতে বাড়ি ভাঙি গেইছে। এ্যালাও বাড়ি কইরবার পাই নাই। হাড়কাঁপা শীতে কম্বল পায়া হামার খুব উপকার হইল। এ্যালা হামরা দুটা মানুষ (স্বামী-স্ত্রী) কম্বল গাত দিয়ে থাকমো। তোমার জন্য দোয়া করমো।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা মাঠে শীতার্ত ২০০ জন নারী–পুরুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। প্রথম আলো ট্রাস্টের অর্থায়নে প্রথম আলো চর ও রসুলপুর চরের শীতার্ত মানুষের মধ্যে এসব কম্বল বিতরণ করে কুড়িগ্রাম বন্ধুসভা।
রসুলপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মমেনা বেগমের মতো ষাটোর্ধ্ব জসিম উদ্দিনও কম্বল নিতে এসেছিলেন নাতিকে সঙ্গে নিয়ে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে কর্মহীন। একা চলাফেরা করতে পারেন না। নাতির সহযোগিতায় লাঠিতে ভর করে চলাফেরা করতে হয়। জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ম্যালা দিন থাকি অসুস্থ হয়্যা বিছানাত পড়ি আছি। কাজকামাই বন্ধ। কম্বল কেনমো টাকা নাই। শীত তো গরিব মানুষ বুঝে না বাহে।’
এর আগে বন্ধুসভার বন্ধু ও প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার শিক্ষকেরা গতকাল বুধবার সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চর, রসুলপুর চরের অসহায় শীতার্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা তৈরি করেন। পরে তাঁদের ২০০ জনের হাতে কম্বল বিতরণের স্লিপ তুলে দেওয়া হয়। বন্ধুসভার বন্ধুদের ওই স্লিপ হাতে নিয়ে আজ চরের শীতার্ত নারী-পুরুষেরা প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা মাঠে কম্বল নিতে আসেন। শীতার্ত যাঁরা অসুস্থতার কারণে কম্বল নিতে আসতে পারেননি, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে বন্ধুসভার বন্ধুরা কম্বল পৌঁছে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো কুড়িগ্রাম বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার সভাপতি সফি খান, প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান, সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদেরসহ অন্য শিক্ষকেরা এবং কুড়িগ্রাম বন্ধুসভার উপদেষ্টা মোখলেছুর রহমান, সভাপতি সিরাতুল জান্নাত, সাংগঠনিক সম্পাদক সুরাইয়া শিমু, জেবা তাকিয়া, ভরসা ও আতিক ও প্রথম আলো কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জাহানুর রহমান।
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪ ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।