দাদি রুসিয়া বেগম (৯০) ছিলেন আবদুল মান্নানের (৪০) সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। দাদিও ভালোবাসতেন নাতি মান্নানকে। সব সময় যত্ন করতেন। মানসিক সমস্যা শুরুর পর মান্নান এলোমেলো আচরণ করলে তিনিই সামলে রাখতেন। সেই দাদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবন্ধী আবদুল মান্নান হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বলরামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ আবদুল মান্নানকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল মান্নান ওই গ্রামের ফজলুর রহমান ও আম্বিয়া খাতুন দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে বড়। কৃষি কাজ করে তাঁদের সংসার চলে। পানের বরজ আছে তাঁদের, বড় ছেলে আবদুল মান্নান সেখানে কাজ করে। ছোট ছেলে কলেজে পড়ছে।
মা আম্বিয়া খাতুন জানান, তাঁর বড় ছেলে আবদুল মান্নান মাঝেমধ্যেই মানসিক রোগী হয়ে যান। এ জন্য তাঁরা অনেক জায়গায় চিকিৎসক দেখিয়েছেন। বছরখানেক আগে পাবনা মানসিক হাসপাতালেও নিয়ে যান। চিকিৎসা করানোর পর ভালো থাকে, আবার হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই মান্নান এলোমেলো আচরণ করতে শুরু করেন।
আম্বিয়া খাতুন আরও বলেন, রাতে তিনি ও তাঁর শাশুড়ি রুসিয়া বেগম ঘরের বারান্দার একপাশে শুয়ে ছিলেন। আরেক পাশে ছিলেন ছেলে আবদুল মান্নান। ছেলের এলোমেলো আচরণের কারণে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলেন তাঁরা। রাত দুইটার দিকে হঠাৎ ঘরে থাকা হাতুড়ি দিয়ে রুসিয়া বেগমের মাথায় আঘাত করেন মান্নান। এ সময় দাদি বাঁচার জন্য উঠানে ছুটে গেলে সেখানে ফেলেই হাতুড়িপেটা করে তাঁকে মেরে ফেলেন। তিনি বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন, ছেলে মান্নান তাঁকেও মারতে যান। একপর্যায়ে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন।
প্রতিবেশীরা জানান, দাদিকে মারার পর আবদুল মান্নান সেখানে বসে থাকেন। বাড়ির মধ্যেই বসে ছিলেন তিনি। পরে হরিণাকুণ্ডু থানা থেকে পুলিশ এসে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, এই দাদির সঙ্গেই ছিল মান্নানের বেশি সখ্য। দাদিকে খুব ভালোবাসতেন, দাদিও দেখভাল করতেন। এর আগে এলোমেলো আচরণ করলে দাদিই সামলাতেন। কিন্তু হঠাৎ কেন তাঁর ওপর আক্রমণ করা হলো, তা তারা বুঝে উঠতে পারছে না।
হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি (তদন্ত) আক্তারুজ্জামান লিটন বলেন, আবদুল মান্নান মানসিক ভারসাম্যহীন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তাঁকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তীকালে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।