এবার শরীয়তপুরে হাতে হাতকড়া আর পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজায় অংশ নিলেন সেলিম রেজা নামে ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা। মায়ের মৃত্যুতে কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেলেও জানাজার সময় তাঁর হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খোলা হয়নি।
গত রোববার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার সুজনদোয়াল গ্রামে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মসজিদের কবরস্থানে তাঁর মাকে দাফন করা হয়। মায়ের দাফনের সময় খোলা হাত-পায়ে কবরে মাটি দিতে পারেননি।
এর আগে মায়ের মৃত্যুতে গত ২০ ডিসেম্বর তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পান গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম। নিজ বাড়িতে নেওয়ার পর তিনি নিজেই মায়ের জানাজা পড়ান। এ সময় তাঁর হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানো ছিল। এ ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনা হয়। মায়ের জানাজায় হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি পরানোকে ‘অমানবিক’ বলে বিবৃতি দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজার পরিবারের সদস্যরা জানান, সদর উপজেলার আনোয়ার হোসেন মুন্সির ছেলে সেলিম রেজা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক। গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ তাঁকে আটক করে। এরপর ১০ ডিসেম্বর পল্টন থানার নাশকতার একটি মামলায় সেলিম রেজাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুরে কেন্দ্রীয় কারাগারের রয়েছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, রোববার সকালে সেলিম রেজার মা নাছিমা বেগম গ্রামের বাড়িতে মারা যান। এরপর আইনজীবীর মাধ্যমে সেলিম রেজার প্যারোল মুক্তির জন্য ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম রেজাকে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ১০ ঘণ্টার জন্য প্যারল মুক্তি দেওয়া হয়।
গাজীপুর জেলা পুলিশ সেলিম রেজাকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে শরীয়তপুরের সুজনদোয়াল গ্রামে নিয়ে আসেন। সেখানে তাঁর মায়ের মরদেহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন স্বজনেরা। রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সমজিদ মাঠে জানাজায় অংশ নেন তিনি। পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা রাত তিনটার দিকে তাঁর মায়ের দাফন করেন। জানাজ ও দাফনের পুরো সময়ে সেলিম রেজাকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখে পুলিশ।
শরীয়তপুর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পকদক ইসহাক সরদার প্রথম আলোকে বলেন, একজন সন্তান রাজনীতি করার অপরাধে হাত–পা বাঁধা অবস্থায় তাঁর মায়ের জানাজায় অংশ নিতে হয়েছে। এর চেয়ে দুঃখের আর কষ্টের কী হতে পারে। মায়ের কবরে মাটিও দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্যারোল মুক্তি দেওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষের থেকে পুলিশের জিম্মায় আসামিকে আনতে হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আসামিকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল। গাজীপুর জেলা পুলিশ তাদের জিম্মায় আসামি নিয়ে শরীয়তপুরে আসেন। পালং মডেল থানা–পুলিশ তাঁদের সহায়তা দিয়েছে মাত্র।
সেলিম রেজার ভাই শামীম মুন্সি বলেন, সেলিম ঢাকার দনিয়াতে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। রাজনীতি করে। কোনো নাশকতার সঙ্গে কখনো জড়ায়নি। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের আগে গণহারে পুলিশ নেতা-কর্মীদের আটক করেছে। সেলিমকেও আটক করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
শামীম মুন্সি বলেন, ‘একজন সন্তান হিসেবে সে স্বাভাবিকভাবে মায়ের জানায় ও দাফনে অংশ নিতে পারেনি। তাঁর হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ তা শোনেনি।’